মায়ের কবর নিয়ে দ্বন্দ্বে ছেলেরা, ওসির হস্তক্ষেপে দাফন
ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার তজবীজপুর গ্রামে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ।
প্রথম নিউজ, যশোর: সন্তানদের অবহেলায় শতবর্ষী আছিরণ বেগমের শেষ জীবনটা কেটেছে জীর্ণ ঝুঁপড়ি ঘরে, মলমূত্রের মধ্যে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানেই তিনি মারা যান। কিন্তু তার কবর নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান সন্তানরা। তাদের মতবিরোধে আটকে যায় দাফন কাজ। অবশেষে থানার ওসির হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার তজবীজপুর গ্রামে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৪আগস্ট) দুপুরে মারা যান বৃদ্ধা আছিরণ বেগম। তিনি মৃত্যুর আগে বলে যান স্বামীর কবরের পাশেই যেন তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু অন্য জায়গায় কবর খোঁড়ার ব্যবস্থা করেন দুই ছেলে বজলু ও ফজলু। এ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন সেজো ছেলে জামির হোসেন ও নাতি নাতনিরা। তাদের দাবি, আছিরণের ওছিয়ত অনুযায়ী তার স্বামীর কবরের পাশে (চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কের পাশে) তজবীজপুর গ্রামে কবরস্থ করতে হবে।
কিন্তু বজলু ও ফজলু এবং তাদের সন্তানেরা গ্রামের মাঠের মধ্যে অন্য স্থানে কবর খোঁড়েন। সেখানেই দাফনের বিষয়ে অনড় থাকেন তারা। এ নিয়ে সন্তান ও নাতিদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। পরে বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।
চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ উভয় পক্ষকে নিয়ে আপোষ-মীমাংসায় বসেন। অবশেষে রাত ১০টার দিকে বজলুর রহমান ও ফজলুর রহমানদের খুঁড়ে রাখা কবরেই আছিরণকে কবরস্থ করার বিষয়ে সবাই একমত হন। রাত ১১টার দিকে তজবীজপুর গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে আছিরণ বেগমকে দাফন করা হয়। চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ নিজেও জানাজায় অংশ নেন।
এ বিষয়ে ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, আপোষ-মীমাংসা শেষে রাত ১১টায় ওই মায়ের জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে বড় দুই ছেলের খুঁড়ে রাখা কবরেই সবার সম্মতিতে তাকে দাফন করা হয়। তিনি আরও বলেন, যেখানে আছিরণ বেগমকে কবর দেওয়া হয়েছে সেটিও তাদের কবরস্থান। তবে তার স্বামীর পাশে দাফন করা সম্ভব হয়নি। সবাই একমত হওয়ায় নতুন কবরস্থানেই দাফন করা হয়েছে।
এদিকে যশোরের চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের তজবীজপুর গ্রামের শতবর্ষী আছিরণ বেগমের নিজ নামে থাকা দুই কোটি টাকা মূল্যের ৮ বিঘা জমি পাওয়ার অব এটর্নি করে লিখে নিয়ে একটি ভাঙাচোরা টিনের ঘরে মলমূত্রের মধ্যে মাকে ফেলে রেখেছিলেন ছেলে বজলুর রহমান ও ফজলুর রহমান। বঞ্চিত করেছেন বৃদ্ধার অন্য দুই ছেলে ও দুই মেয়েকেও।
গত ২২ জুন একটি মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বিভিন্ন ধরনের ফল কিনে নিয়ে গিয়ে ওই মাকে মলমূত্রের মধ্যে থেকে ছেলে বজলুর রহমানের ফ্ল্যাট বাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসেন। এরপরও মাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে থাকেন বজলু ও ফজলু। পরে তার মেয়ে তাকে নিয়ে যান তার (মেয়ের) বাড়িতে। তবে মা’ সেখানে না থাকতে চাওয়ায় কয়েকদিন আগে আবারও ছেলের বাড়িতে দিয়ে যান তাকে। এরপরই ছেলে বজলু ও ফজলু আবারও মাকে সেই ঝুঁপড়ি বাড়িতে রেখে আসেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews