মেয়েকে ফিরে পেতে ৭ বছর ধরে মায়ের লড়াই

গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার বাদিয়াখালী রামনাথের ভিটা গ্রামের দরিদ্র কাসেম আলীর সুন্দরী কিশোরী কন্যা শাপলা বেগম।

মেয়েকে ফিরে পেতে ৭ বছর ধরে মায়ের লড়াই
মেয়েকে ফিরে পেতে ৭ বছর ধরে মায়ের লড়াই

প্রথম নিউজ, গাইবান্ধা : চাকরি দেয়ার কথা বলে কিশোরী মেয়েকে ফুসলিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে ২ অপহরণকারীর বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা হয়েছে। মামলার ৭ বছর পার হলেও অসহায় মা সাজেদা বেগম তার মেয়েকে না পেয়ে দিশাহারা। জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার বাদিয়াখালী রামনাথের ভিটা গ্রামের দরিদ্র কাসেম আলীর সুন্দরী কিশোরী কন্যা শাপলা বেগম। বাবা কামলা খাটেন। মা সাজেদা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তারপরও মেয়েকে মানুষ করতে পড়ালেখা শেখাতেন। স্থানীয় বাদিয়াখালী স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে শাপলা পড়তো।

একটু সুন্দরী বলে একই এলাকার নারী পাচারকারী বলে পরিচিত তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের নজর পড়ে তার উপর। চাকরি দেয়ার নাম করে তারা শাপলা ও তার মা-বাবাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যান ঢাকায়। নিয়ে যাওয়ার আগে ভালো আয়-রোজগারের কথাও বলেন। এতে শাপলার দরিদ্র পিতা-মাতা রাজি হয়ে যায়। সেই সূত্রে তাজুল ইসলাম কিশোরী শাপলার মা সাজেদা বেগম ও বাবা কাসেম আলীকে বিভিন্নভাবে লোভ দেখান। ঢাকায় চাকরি করলে ভালো বেতন পাবে,  ভালো চলবে, সুখে থাকবে এবং আপনাদের সংসারেও টাকা দিতে পারবে।

নারী পাচারকারী তাজুল ইসলামের চালাকির ফাঁদে পা দেয় শাপলাসহ তার মা ও বাবা। মেয়ের চাকরি হবে এই আশায় মেয়েকে ২০১৪ সালের ৩১শে অক্টোবর দুপুরে শাপলাকে তারা নিয়ে যায় ঢাকায়। কিছুদিন পর শাপলার বাবা-মা তার মেয়ের খোঁজ নিতে চাইলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। পাচারকারীরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলে আমরা শাপলার কোনো খোঁজ জানি না। মেয়ের কোনো খোঁজখবর না পেয়ে ২০১৫ সালের  ২৮শে  মে শাপলার মা সাজেদা বেগম বাদী হয়ে গাইবান্ধা সদর থানায় তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর হঠাৎ ২০১৫ সালের ২৩শে মার্চ শাপলার  মায়ের মোবাইলে ফোন আসে। অপরপ্রান্ত থেকে শাপলা কেঁদে চিৎকার করে বলে, মা আমাকে বাঁচাও! তাজুল আমাকে আটকে রেখেছে। এ কথা বলার পর কে যেন তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়।  

তার বাবা কাসেম আলী ও মা সাজেদা বেগমের ধারণা, তার মেয়েকে দিয়ে কোনো খারাপ কাজে লিপ্ত করা হয়েছে। তাকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের ৭ বছর অতিবাহিত হলেও তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে শাপলার খোঁজ না পেয়ে তারা আবারো চলতি বছরের ৯ই জানুয়ারি গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার অভিযোগটি তদন্তের জন্য গাইবান্ধা থানায় পাঠালো পুলিশ আবারো তৎপর হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদুর রহমান জানান, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু তার মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মেয়ের মা আবারও অভিযোগ দিয়েছে, অভিযোগ অনুযায়ী আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

 Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: