মিনস্ক চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনকে প্রস্তুত করতে সময় নেয়া: মার্কেল
প্রথম নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৪ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেন ‘মিনস্ক শান্তিচুক্তি’ করেছিল। ওই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিল জার্মানি ও ফ্রান্স। মূলত ওই চুক্তির ফলেই ৮ বছরের জন্য যুদ্ধ থেমে ছিল। তবে এ বছরের শুরুতে রাশিয়া মিনস্ক চুক্তি বাতিল করে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানের আগে থেকেই দেশটি বারবার বলে আসছিল, মিনস্ক চুক্তি করার পেছনে ইউক্রেনের আসল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা। এবার জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও সে কথাই জানিয়েছেন। বুধবার প্রকাশ হওয়া তার এক সাক্ষাৎকারে মার্কেল বলেন, ২০১৪ সালে ওই যুদ্ধবিরতির আসল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সময় নেয়া এবং সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়েছে। জার্মানির জেইত ম্যাগাজিনকে ওই সাক্ষাৎকারটি দেন মার্কেল। এতে তার ১৬ বছর ধরে ক্ষমতাকালের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি। তার দাবি, রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে তিনি যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা সফল হোক বা না হোক, সঠিক ছিল।
মার্কেল বলেন, ২০১৪ সালের মিনস্ক চুক্তি ছিল মূলত ইউক্রেনকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য কিছু সময় দেয়ার প্রচেষ্টা। ওই বছর ইউক্রেনের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে ক্রাইমিয়া ও দনবাস অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
ক্রাইমিয়া এক গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। যদিও এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয় না পশ্চিমা দেশগুলো। দনবাসেও স্বাধীনতার ডাক দেয়া হয়। ফলে সেখানে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ও স্থানীয় বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে বিদ্রোহীদের সহায়তা করতে থাকে রাশিয়া। দ্রুতই দনেতস্ক ও লুহানস্কের বড় একটি অংশ স্থায়ীভাবে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। দিন যত যাচ্ছিল বিদ্রোহীরা নতুন নতুন জায়গা দখল করে চলেছিল।
ঠিক এমন প্রেক্ষাপটেই ২০১৪ সালে মিনস্ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির ফলে রুশপন্থীরা অগ্রসর বন্ধ করে। যদিও মিনস্ক চুক্তিকে এখন বড় ভুল বলেই মনে করেন রাশিয়ার নেতৃত্ব। সামরিক শক্তির মাধ্যমে দনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল দখলে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল ইউক্রেন। রাশিয়ার দাবি, শান্তি চুক্তির আড়ালে নিজেদের সামরিকভাবে প্রস্তুত করছিল দেশটি। তাদেরকে সেই সুযোগ না দিতেই এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ চালায় মস্কো।
এতদিন রাশিয়ার তরফ থেকে এমনটা বলা হলেও এবার মার্কেলও একই কথা জানালেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন এই সময়টা কাজে লাগিয়ে নিজেকে শক্তিশালী করেছে। আজকে আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি। ২০১৪/১৫ সালে যে ইউক্রেন ছিল, আজকের ইউক্রেন সেই একইরকম নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তখন চাইলে সহজেই তাদের হারিয়ে দিতে পারতো। তাছাড়া ন্যাটো এখন যেভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করছে, তখন তারা সেটা করতো কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।
মার্কেল আরও বলেন, চুক্তির মাধ্যমে এই সংঘাত জমে ছিল। কিন্তু আমরা সবাই জানতাম, এর কোনো সমাধান হয়নি। আমরা শুধু ইউক্রেনকে মূল্যবান সময়ের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলাম। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত ক্যু এর মাধ্যমে ইউক্রেনের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপরে ক্ষমতায় আসেন পিটর পোরোশেঙ্কো। তিনি ২০১৫ সালের আগস্টে বলেছিলেন, মিনস্ক চুক্তির আসল উদ্দেশ্যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলার জন্য সময় নেয়া।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন মিনস্ক চুক্তির অপব্যবহার করছে এমন অভিযোগ তুলে এ বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী দনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার কথা ছিল ইউক্রেনের। তবে তারা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে এই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া এবং সেখান থেকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দিতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। যুদ্ধের প্রথম এক মাসের মধ্যেই রুশপন্থী অঞ্চলগুলো দ্রুত দখল করে নেয় মস্কো। এরমধ্যে চার অঞ্চলকে ক্রাইমিয়া স্টাইলে গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তবে পশ্চিমারা এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। মস্কো এখন যুদ্ধ বন্ধে যে কয়েকটি প্রস্তাব দিচ্ছে তার মধ্যে এই চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি অন্যতম। পাশাপাশি ইউক্রেন কখনও ন্যাটোতে যোগ দেবে না এবং রাষ্ট্র হিসেবে নিরপেক্ষ থাকবে এমন গ্যারান্টিও চাইছে দেশটি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews