মানুষ বলছে- কিসের ভোট? আমরা এই ভোট দিতে যাবো না: মান্না
মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইল মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ৭ই জানুয়ারি ভোট বাতিল না করলে ‘জনগণ শান্ত থাকবে না, সমুচিত জবাব দেবে’ বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইল মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। মান্না বলেন, এটা কোনো নির্বাচন না। মানুষদের বলছি, এই ভোট দিতে যাবেন না। আমি এখানে বসে ছিলাম দেখলাম কয়েকজন রিকশাওয়ালা গেলো- সাংবাদিক ভাইয়েরা হয়ত খেয়াল করেছেন তারা কি বলতে বলতে গেছে আপনারা শুনেছেন। রিকশাওয়ালা, পান-বিড়ি দোকানদার, গ্রামে যে সমস্ত চায়ের দোকান আছে, হাট-বাজার সমস্ত জায়গায় মানুষ বলছে, কিসের ভোট? ভোট তো আগেই হয়ে যায়, এই ভোট আমরা দিতে যাবো না। সরকারের উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, এরপর একেক করে যদি আবারো সারা দুনিয়া থেকে আপনাদের (সরকার) ওপরে চাপ আসে সহ্য করতে পারবেন? আমরা তো ওই জন্য চিন্তিত। আমরা দেশকে ভালোবাসি তাই বলি- এই ভোট বাতিল করেন, সংসদ ভেঙে দেন এবং একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেন। জানি একথা শুনবেন না আপনারা। কিন্তু তবুও ভালো কথা বলতে তো দোষ নাই।
ভালো কাজ যদি না করেন নিশ্চিত থাকতে পারেন জনগণ এরকম শান্ত থাকবে না। নিশ্চিত থাকতে পারেন আমরা যেরকম করে কেবল লিফলেট বিতরণ করছি, সভা করছি মানুষ বলবে, সব বন্ধ করে দাও, হরতাল দাও, অবরোধ দাও আবার... এই নির্বাচন আমরা যাবো না। মান্না বলেন, নির্বাচন তো হচ্ছে না। নির্বাচনে নামে যা হচ্ছে এগুলো দেখছেন আপনারা। সরকারি দলের নেতা তারা যা কথা বলছে সেই কথাগুলো আপনারা শুনছেন। আমরা শুধু বলছি, জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। সেই দাবি ছাড়ব না আন্দোলন করবো যতক্ষণ পর্যন্ত এই অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে সেখানে বৈধ জনগণের পছন্দমতো সরকার গঠন করতে না পারি। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি এবং ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনের ডাকে গণতন্ত্রমঞ্চ কাকরাইল মোড়ে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ শান্তিনগর-মালিবাগ সড়কে মিছিল বের করে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তারা (সরকার) গুঞ্জন ছড়িয়ে দিয়েছে যে, ৭ তারিখের পরে বিএনপিকে তারা নিষিদ্ধ করতে পারেন কিনা। এরকম উদ্যোগ অতীতে যারা নিয়েছেন যারা রাজনৈতিক বিরোধীদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে যারা প্রশাসনিক অর্ডার দিয়ে নিষিদ্ধ করতে গেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মৃত্যু ঘটেছে। মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদেরকে বর্জন করেছে। আমি আশা করি, ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ সেই পথে হাঁটবে না। যখন আপনি অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়েন সেদিন লোকেরা বলত পাশে আরেকপা গর্ত খুঁড়ে রাখবেন কারণ এই গর্তে পরেরদিন হয়ত আপনাকেই পড়তে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনও শর্ত দিচ্ছেন যে, নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া থেকেও নাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে লক্ষণটা আপনারা দেখছেন। বিবিসি গতকাল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ ইলেকশন হ্যাজ বিকাম এ ওয়ান উইমেন সো। দুনিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই নির্বাচনকে সরকার, সরকারি দলের এবং বিশেষ ব্যক্তিদের তাদের ইচ্ছা পূরণের, তাদের অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করছেন। কেউ এটা জাতীয় নির্বাচন বলছেন না। ডিপ্লোমেটরা তাদের দেশে বার্তা পাঠাচ্ছে যে, বাংলাদেশে এটা নির্বাচন না, তারা বলছেন, স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন, বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা এটাকে নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। সেজন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবকে (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলছি, যে, খেলা আপনারা শুরু করেছে, এটা আপনাদের জন্য খেলা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য নতুন একটা বিপর্যয়, নতুন একটা বিপদ আপনারা ডেকে আনছেন। তাই বলব, এই খেলাটা বন্ধ করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন। ৭ তারিখে যা হচ্ছে সেটা সুষ্ঠু নির্বাচন না, তামাশা, একই দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে তথাকথিত ভোটার আনার জন্য। কাজেই মানুষের এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ নাই, মানুষ ভোট দিতে যাবে না। আমরা সরকারকে বলি, এখনো সময়ে আছে- সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী করতে পারেন পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, সমস্ত দলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন, সংকট সমাধান করেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। সেটা সকলের জন্য মঙ্গল। আর না হয় এদেশের মানুষ সংগ্রাম করতে জানে, এই দেশের মানুষ সংগ্রাম করবে, তার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া তারা সহ্য করবে না। নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিজুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।