মানব পাচার আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়ায় বেড়েছে রেমিটেন্স, কমেছে হয়রানি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিক্রুটিং এজেন্সিকে হয়রানি না করার জন্য স্বরাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেন।

মানব পাচার আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়ায় বেড়েছে রেমিটেন্স, কমেছে হয়রানি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর অপপ্রয়োগ বন্ধের দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। এই বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসারের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিক্রুটিং এজেন্সিকে হয়রানি না করার জন্য স্বরাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২৪ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে একদিকে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বায়রার সদস্যরা সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারছে। আজকে দেশে বৈধপথে যে রেমিটেন্স আসছে এই সকল প্রবাসীরা বায়রার মাধ্যমে বৈধপথে বিদেশ গেছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার(১৪ জুন) রাতে নগরীর অফিসার্স ক্লাবে রিক্রুটিং এজেন্সি ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েটস (রাফা) আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বায়রা'র সাধারণ সদস্যদের দীর্ঘ দিনের বহুল আকাঙ্ক্ষিত দাবী বাস্তবায়ন করার জন্য, রিক্রুটিং এজেন্সি ফেন্ডস এসোসিয়েটসের (রাফা) আয়োজনে মোহাম্মদ আবুল বাসার সহ কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যবৃন্দকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বায়রা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ বলেন, বায়রার সমস্যার শেষ নেই। একটার পর একটা সমস্যা লেগেই থাকে। মানব পাচার আইন বায়রার মূল সমস্যা ছিল। এই আইন বন্ধ হওয়ায় একদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে অন্যদিকে বায়রার সদস্যরা সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারছে।

আজকে সংসদে রেমিটেন্স নিয়ে কথা হয়। এই রেমিটেন্স প্রবাহের অন্যতম কারিগর বায়রা। কারণ তাদের মাধ্যমে বৈধপথে পাঠানো প্রবাসী ভাই বোনেরা আজকে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। মানব পাচার আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়ায় একদিকে রেমিটেন্স বেড়েছে অন্যদিকে বায়রা সদস্যদের হয়রানি বন্ধ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময় মানব পাচার আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধের পক্ষে। আমরা বৈধভাবে বিএমইটি’র মাধ্যমে বৈধপথে বিদেশে লোক পাঠায়। অথচ এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে আমরা হয়রানির শিকার হতাম। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে মান সম্মান নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে। কারণ আমাদের সমাজে একটা অবস্থান আছে। অনেক সময় বিনা কারণে র‌্যাব ধরে নিয়ে গিয়ে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করে এতে সমাজে বেঁচে থাকার মতো উপায় থাকে না। আমরা এই আইন চায়, যারা অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠায় তাদের ধরা হোক এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু বায়রা সদস্যদের হয়রানি বন্ধ হোক। এই মানব পাচার আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধের জন্য আমিও কাজ করেছিলাম। কিন্তু সমাপ্ত করতে পারি নাই। বায়রা সদস্যরা যদি এক থাকে তবে সকল সমস্যা সমাধান হবে। এর পরও ছোটখাটো সমস্যা থাকে। যারা আমাদের উপর মিথ্যা মামলা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা মিথ্যা মামলা করে তাদের থেকে বায়রার শক্তি কম নয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখন অনেক নমনীয় হয়েছে।

বায়রা সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার বলেন, আমরা নানা ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। এই জন্য ৬৮০ জন কে ১ লাখ করে টাকা দিয়েছি। সৌদি দূতাবাসে সমস্যা ছিল এটাও সমাধান করেছি। এখন বছরে ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ সৌদি আরবে গিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখছে। বিএমইটিতে এক সময় স্মার্ট কার্ডের চেহারা বোঝা যেত না এটা সমাধান করেছি।’

মানব পাচার আইনের অপপ্রয়োগ প্রসঙ্গে আবুল বাসার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় বিনা কারণে আমাদের হয়রানি করে। আমাদের তখন সম্মান ও মর্যাদা বলতে কিছু থাকে না। সমাজের আমাদের কিন্তু একটা অবস্থান আছে। তবে যারা মানব পাচার করে তাদের শাস্তি হোক। তবে যারা বৈধপথে লোক পাঠায় তাদের হয়রানি বন্ধ হোক। কিন্তু যারা অবৈধপথে লোক পাঠায় তাদের শাস্তি হোক। রাফা সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বারাকাত ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বায়রা মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী, বায়রার সহ-সভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলাম, সাবেক বায়রা মহাসচিব রুহুল আমিন (স্বপন), রাফা’র সাধারণ সম্পাদক মা: ফরিদ আহমেদ, রাফা’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।