ভাই-চাচাকে নিয়ে ই-অরেঞ্জ থেকে ১৮ কোটি টাকা সরিয়েছেন সোনিয়া

রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল কাইয়ুম লিটন বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন। আজ বুধবার  হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

 ভাই-চাচাকে নিয়ে ই-অরেঞ্জ থেকে ১৮ কোটি টাকা সরিয়েছেন সোনিয়া

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কাছে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না, সেটি খুঁজে দেখতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার আলোকে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীন, তার ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ গ্রাহকদের ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা সরিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হিসাব থেকে এসব টাকা সরানো হয়েছে।

রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল কাইয়ুম লিটন বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন। আজ বুধবার  হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

ই-অরেঞ্জ থেকে পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার দাবি করে ৫৪৭ গ্রাহকের পক্ষে ছয় গ্রাহকের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চলতি বছরের গত ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে প্রতিবেদন চান।

রুলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত বনানী থানার সাময়িক বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা, স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বিথি আক্তারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রাহক ঠকানো ও অর্থপাচারের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

একই সঙ্গে সোহেল রানা, স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বিথি আক্তারসহ অন্যদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে ক্ষতি অনুপাতে আবেদনকারীসহ অন্যান্য প্রতারিত গ্রাহকদের মাঝে সে টাকা বণ্টন বা বিতরণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। ওই আদেশ অনুসারে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও আব্দুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম খালেদ।

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ই–অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত সোহেল রানাকে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনুপ্রবেশের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। ই-অরেঞ্জ থেকে ৭৭ কোটি টাকার পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে মো. আফজাল হোসেন, মো. আরাফাত আলী, মো. তরিকুল আলম, সাকিবুল ইসলাম, রানা খান ও মো. হাবিবুল্লাহ জাহিদ নামের ছয়জন গ্রাহক গত মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ই-অরেঞ্জ, অরেঞ্জ বাংলাদেশ ও রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের নামে ১৩টি হিসাব খুলে লেনদেন করেন। এ ১৩ হিসাবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেন করেছেন। এই সময়ে ১,১১১ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা জমা ও ১,১০৯ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ২,২২১ দশমিক ৪২ কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। আর সোনিয়া ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানের নামে ২৪টি হিসাবে লেনদেন করা হয়। ওই ২৪টি হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি প্রায় ১২০ কোটি টাকার লেনদেন করেন।

এসব হিসাব স্থগিতের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সিআইডির অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাদের পরিচালিত সব হিসাব লেনদেন ২০২১ সালের ২৫ জুলাই স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে এটির মালিকনায় সোনিয়া মেহজাবিন থাকলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত) শেখ সোহেল রানার স্ত্রী নাজনীন নাহারা বিথির নামে হস্তান্তর করা হয়।

অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ নগদে টাকা উত্তোলন ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর এবং নিজ নামে ক্রয় করার জন্য মোট ১৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জের হিসাব হতে স্থানান্তর/উত্তোলন করেন। গ্রাহকদের অগ্রিম মূল্য পরিশোধিত অর্ডারের কাঙ্ক্ষিত পণ্য সরবরাহ না করে সন্দেহভাজন উল্লিখিত অর্থ তাদের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর নগদে উত্তোলন ও ব্যক্তিগত স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করেছেন মর্মে পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রতারণার শামিল।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom