বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ৯৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিলো ছাত্রশিবির

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ৯৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিলো ছাত্রশিবির
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ৯৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিলো ছাত্রশিবির

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  

৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর তিনটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে ‘অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা’ দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ‘মেধা ও সততায় গড়ব সবার বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের মোট ৯৮ শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট ও উপহার দেয় ছাত্রশিবির। এ সময় নেতারা শিক্ষার্থীদের না বলা গল্পগুলো দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ৯৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিলো ছাত্রশিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকারকর্মী ইবনু আহমেদ বলেন, আমাদের পথচলা যেন আরও মসৃণ হয়, আমাদের পথচলা সহজ করতে আপনারা স্বপ্নসারথি হয়ে কাজ করুন। আমাদের রাজনৈতিক অধিকার নেই, আমরা আমাদের কথাগুলো প্রকাশ করতে পারি না। আমি আবেদন জানাই, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ গড়তে আমরা যেন সমানভাবে সুযোগ পাই।

এতে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, একজন সাধারণ মানুষ যেমন সুবিধা ভোগ করে, তারা যেমন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেতে পারে তেমনই আপনারাও বঙ্গভবন, গণভবন ও জাতীয় সংসদে যাবেন ইনশাআল্লাহ। ছাত্রশিবির আপনাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

প্রধান অতিথি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, হোমার ছিলেন অদম্য, তাকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আটকে রাখতে পারেনি। হেলেন কিলার ও স্টিফেন হকিংও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ছিলেন না। কিন্তু এই তিনজনই বিশ্বে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন। তারা তাদের কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাদের আটকাতে পারেনি। আমি আশাবাদী, তোমরাও তাদের মতো কাজের মাধ্যমে দেশবিদেশে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, একসময় এই ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব ছিল। ক্যাম্পাসে লাশের মিছিল হতো। কিন্তু এখন ক্যাম্পাসে সম্প্রতি বজায় আছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে, আল্লাহর বাণী উচ্চারিত হচ্ছে। ছাত্রশিবির তাদের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমন একটা মহৎ কাজ করছে সেজন্য তাদের শুভকামনা জানাই।

সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে আপনাদের অনেক বাঁকা কথা সহ্য করতে হয়েছে। তবুও আপনাদের অদম্য ইচ্ছা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করছেন। আপনাদের সামনের দিনগুলো যেন আরও সহজতর হয় সেই কামনা করি। এসময় তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন এবং তাদের প্ল্যাটফর্মকে শক্তিশালী করতে শিবিরের তিনটি সেক্টর কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বিশেষ প্রয়োজনসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের নিকট ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:

১. শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য চাহিদার আলোকে ভাতা ও শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানো এবং সহায়ক উপকরণ সহজপ্রাপ্য করতে হবে।

২. সরকারি-বেসরকারি ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের অবকাঠামো এবং গণপরিবহনকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৩. জাতীয় সংসদ ও নীতিনির্ধারণী জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহায়ক উপকরণ, প্রশিক্ষিত শিক্ষক, বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি ও প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সরকারি-বেসরকারি খাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ ও সমান বেতন নিশ্চিত করতে হবে।

৬. প্রতিবন্ধীদের জন্য অধিকার রক্ষায় ইউএনসিআরপিডির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ৯৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিলো ছাত্রশিবির

এ সময় তিনি সরকারের কাছে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি, ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরেন। তিনি আশ্বাস প্রদান করে বলেন—
১. শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ, ছাত্র অধিকার এবং মানবাধিকার বিভাগ যৌথভাবে কাজ করবে।

২. পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কার্যকর প্রচারণা চালাবে এবং তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় বুয়েটের অধ্যাপক ড. ফখরুল ইসলাম, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা নজরুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।