বাংলাদেশের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য খারাপ দিন
দ্য গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয়
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশের জন্য একইসঙ্গে সেরা সময় ও খারাপ সময় উভয়েই নিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার টানা ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্যতা অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং মাথাপিছু জিডিপি ৩০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তার এই পারফরমেন্স বেশ চিত্তাকর্ষক হলেও, একটি একদলীয় রাষ্ট্রের উত্থানের কারণে সেই অর্জন ক্ষুণ্ন হয়েছে। গত বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশজুড়ে হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর এ প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ নভেম্বর মাসে জানিয়েছিল, সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতা ও সমর্থকদের জেলে পাঠানো হয়েছে, এমনকি হত্যাও করা হচ্ছে।
এই নির্বাচন বয়কট করেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এরমধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এসেছে। যদিও এটি একটি ফাঁপা বিজয় ছিল কারণ প্রতি ১০ জনের মধ্যে মাত্র চারজন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এ বছর ৮০টি দেশে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র বছরের শুরুতেই যেন হারলো। লন্ডন ও ওয়াশিংটন জানিয়েছে, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। তবে ঢাকার বন্ধু ভারত ও চীন উভয় দেশই শেখ হাসিনার জয়কে স্বাগত জানিয়েছে।
১৯৯০ সালের পর সামরিক শাসন মুক্ত হয় বাংলাদেশ, পরিণত হয় একটি নির্বাচনী গণতন্ত্রে। আস্তে আস্তে দেশটির উৎপাদন ও বস্ত্র খাত উন্নতি লাভ করেছে। দেশটি গড় আয়ু ও নারীর কর্মসংস্থানে বৃহত্তর প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় এগিয়ে আছে। রাজনীতির এমন হালের পরেও বাংলাদেশ এই সফলতা অর্জন করেছে।
বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং গৃহবন্দি। তার সহযোগীরা হয় জেলে অথবা নির্বাসনে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার আগে শেখ হাসিনাও কারাগারে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে ঘূর্ণিঝড়, গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের মতো সংকটের মধ্য দিয়ে। বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং কর্মসংস্থান ইস্যুতে বিভক্ত রাজনীতিবিদদের থেকে বেশি সক্রিয় ছিল। দেশটিতে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাক, যার বিশ্বব্যাপী পদচিহ্ন রয়েছে এবং এর বার্ষিক আয় এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে সমপ্রতি নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করে বাংলাদেশের একটি আদালত। এতে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তেই বিপদ সংকেত বেজে ওঠে। গত বছর বারাক ওবামা সহ অন্তত ১৭০ প্রভাবশালী ব্যক্তি ইউনূসের ওপর চলমান ‘নিরবচ্ছিন্ন বিচার বিভাগীয় হয়রানি’- বন্ধ করার আহ্বান জানান। ৮৩ বছর বয়সী ইউনূস তার ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছেন। যদিও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে গরিবদের রক্ত চুষে খাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।
সংসদীয় গণতন্ত্রে এমন মানসিকতা কাজ করা উচিত নয় যে- বিজয়ীরাই সবকিছু নিয়ে নেবে। সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, যাতে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিরোধীদের রাজপথে নামার দরকার না হয়। শেখ হাসিনার বয়স ৭৬ আর বিএনপি’র প্রধান খালেদা জিয়ার বয়স ৭৮। উভয়কেই বুঝতে হবে যে, তাদের দেশ যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে চলতে থাকলে দেশের ক্ষতি হবে। উভয়ের জন্য নিশ্চিতভাবে পৌঁছানো শুরু করা ভালো। তাদের উচিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করা। সরকারকে অবশ্যই ভয়ের পরিবেশ পাল্টে দিতে হবে এবং বিরোধীদের পুনরায় গঠনমূলক উপায়ে যুক্ত হতে হবে। বাংলাদেশের মতো জটিল সমাজে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দাবিগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে মিটমাট করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার পরিবর্তে স্বৈরাচারকে বেছে নেয়া বোকামি হবে।