ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়িয়ে ৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্র

শুক্রবার রাজধানীর টিসিবি ভবনে অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ঢাকা বিভাগের ক্যাবের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণবিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়িয়ে ৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্র

প্রথম নিউজ, অনলাইন: প্রতিটি স্তরেই অতি মুনাফা লাভের প্রবণতার কারণে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ানোর মধ্যে একটি চক্র ৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। শুক্রবার রাজধানীর টিসিবি ভবনে অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ঢাকা বিভাগের ক্যাবের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণবিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া প্রমুখ।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, বর্তমানে বাজারে আবারও মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। যেসব বড় বড় খেলোয়াড় বাজারে মাংসের দাম বাড়াচ্ছে আমরা রমজানের আগে তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসেছিলাম। তখন এক আলোচনায় ২৫০ টাকার মুরগি ১৯০ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হয়েছেন তারা। প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯০ টাকায় বিক্রি করেও তারা যে লাভ করেছেন তা মোটেও কম নয়। মুরগির দাম বাড়িয়ে কয়েকদিনের মধ্যে সে সময়ে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট করেছে ওই সব বড় বড় কোম্পানি। এই টাকা মূলত ভোক্তার। 

তিনি জানান, শুধু মুরগি নয়, ডিজেলের দাম বাড়ার পর ডিমের বাজার অস্থির করে তোলা হয়েছিল। ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় ডাব এবং স্যালাইন নিয়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। লোকবলের অভাবে সবদিকে নজর দেওয়া ভোক্তা অধিকারের পক্ষে সম্ভব নয়। 

সফিকুজ্জামান বলেন, যারা ক্যাবের সদস্য তারা বেতনভুক্ত কোনো চাকরি করেন না। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে প্রতিটি ক্যাব সদস্য দেশজুড়ে কাজ করছেন। এদের কেউ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, কেউ আইনজীবী, কেউ কেউ বড় ব্যবসায়ী। সবার উদ্দেশ্য ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা। যে ক্যাবের দাবির ফলে আজকের ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সেই ক্যাবই যেন বর্তমানে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ক্যাবকে আওয়াজ তুলতে হবে, ভোক্তার অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লে­খ করে সফিকুজ্জামান বলেন, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসাবে নানা ক্ষেত্রে হাত-পা বাঁধা থাকে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর যেখানে শেকলবদ্ধ, সেখানে ক্যাব আওয়াজ তুলে ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যতটা সক্রিয় ক্যাবের হওয়ার কথা ছিল, ততটা সক্রিয় হতে পারেনি সংস্থাটি।

ক্যাবের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান বাজারে বিশৃঙ্খলা করছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, কয়েকদিন আগেও পঞ্চগড়ে একটি সংস্থার সদস্যদের আটক করে আইনের হাতে তুলে দিয়েছে ভোক্তা অধিকার। কনজুমারস রাইটস সোসাইটি নামে প্রতিষ্ঠান খুলে দেশে চাঁদাবাজি করছিলেন তারা। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে নিজেদের কমিটি দিয়েছে। প্রতি জেলায় ক্যাবের কমিটি থাকার পরও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা কেন আওয়াজ তুলতে পারেনি। 

বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সফিকুজ্জামান বলেন, সকালে ঘুম ভেঙে দেখি পেঁপের কেজি ১০০ টাকা হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে দেখলাম পচা মিষ্টি দিয়ে নাটোরের কাঁচাগোল্লা বানানো হচ্ছে। ডায়াবেটিসের স্ট্রাইপ কিংবা হার্টের ভাল্ব নকল করা হচ্ছে। বাজারের এমন দশা হয়েছে যেখানে দ্রব্যমূল্য ও পণ্যের মান ঠিক রাখা দিনকে দিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে।