বাবা-মায়ের সুখের সঙ্গে আপসহীন ছিলেন সাংবাদিক মেহেদী

 বাবা-মায়ের সুখের সঙ্গে আপসহীন ছিলেন সাংবাদিক মেহেদী

প্রথম নিউজ, ঢাকা : কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা যান ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী। ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সহিংসতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হন তিনি। মেহেদীর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে তার পরিবার। বাবা-মায়ের চিকিৎসা আর দুই মেয়ের অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছে পরিবারটি।

অসুস্থ বাবা-মায়ের জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন হতো ১০ হাজার টাকার ওষুধ। এছাড়া পরিবারের খরচসহ সব কিছুই চলতো হাসান মেহেদীর আয়ে। বুলেটের আঘাতে মেহেদীর পাশাপাশি সব কিছুই থমকে গেছে।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে এক সাধারণ পরিবারের সন্তান হাসান মেহেদী। ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনে বেড়ে ওঠা মেহেদী ছিলেন পরিবারের সবার প্রিয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী সবার বড়। তাই তো তার প্রতি সবার যেমন বাড়তি ভালোবাসা, তেমনি মেহেদীও ছিলেন পরিবারের প্রতি আন্তরিক। মেহেদীর বেড়ে ওঠা এবং তার বিভিন্ন স্মৃতি এখনো কাঁদাচ্ছে স্বজনদের।

সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে পটুয়াখালীর বাউফলে হাসান মেহেদীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানেই হাসান মেহেদীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। পাকা সড়কের পাশেই দোচালা টিনের ঘর ভেঙে কিছুদিন আগে মেহেদী তৈরি করেছেন আধা পাকা টিনশেড বাড়ি। তবে এজন্য মেহেদীকে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। প্রতি মাসে মেহেদী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন।

পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে বাবা-মাকে ভালো রাখতে মেহেদী ছিলেন অপসহীন। তাই তো পরিবারের স্বজনরা এখনও মেহেদীর কথা মনে করে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন।

মেহেদীর খালা মাহিনুর বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছোট বেলায় মেহেদীর অনেক খুজলি প্যাচরা (চর্মরোগ) ছিল। এত ঘাঁ হইছিল মনে করছি বাবায় বাঁচপে না। কিন্তু বাজানরে আমরা অনেক চেষ্টা কইরা সুস্থ করছি। বরগে হোয়াইয়া রাখতাম, নিমপাতা, কাঁচা হলুদ বাইট্টা গায়ে দেতাম। হেই বাবায় আমার লেহাপড়া কইরা বড় হইছে। সাংবাদিক হইছে, আমরা গর্ব করতাম। বাবায় আমাদের সবার খোঁজখবর নিতো। আগে দোচালা টিনের ঘর ছিল, হের বাপ-মার লইগ্যা বিল্ডিং করছে। বাহের চিকিৎসার লইগ্যা সব সময় ব্যস্ত আছেলে। হের চিন্তা আছেলে কীভাবে মা-বাপরে একটু সুখে রাকপে।’

মেহেদীর কবরের পাশেই বসে বিলাপ করছিলেন চাচি রেবা আক্তার। বলেন, ‘মেহেদী দেখতে যেমন উঁচা-লম্বা ছিল তেমনি ভদ্র একটা ছেলে। সকলের মন জয় করে চলতো। তার স্বপ্ন ছিল মেয়ে দুইটাকে ভালো করে মানুষ করবে। বাবা-মাকে কীভাবে ভালো রাখা যায় সব সময় সেই চিন্তা থাকতো। ছোট দুই ভাইসহ পরিবারটার হাল ধরে রাখছিল। তবে সব কিছু শেষ হইয়া গেলো।’

মেহদীর সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যা রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন।

মৃত্যুর পর মেহেদীর পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমসের হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন।

এর আগে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ২৪, দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক বাংলাদেশের আলোয় কাজ করেছেন।