বিএনপি অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে : কামরুল

বিএনপি অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে : কামরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা : আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপি এখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছে। এখন বিএনপির নেতাদের কথাবার্তা শুনে বোঝা যাচ্ছে, তারা খারাপ দিকে যাবেন না। তারা অবরোধ, হরতাল বা নাশকতা ও সন্ত্রাসের দিকে আর যাবেন না। অতীত থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

শনিবার (১৫ জুলাই) আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম অ্যাড. সাহারা খাতুনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ।


কামরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে না এসে নাশকতা করে যে ভুল তারা (বিএনপি) করেছেন ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে এসেও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে কাজটি তারা করেছেন, সেখান থেকে তারা অনুধাবন করেছেন তারা ভুল করেছেন। তারা সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে নাশকতা, সন্ত্রাসের পথে না হাঁটলে ভালো। তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করুক, আমরা রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করব। আর সন্ত্রাসের পথে হাঁটলে, নাশকতা করতে চাইলে তাদের খবর আছে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর মোকাবিলা করব।

বিএনপিসহ সবাইকে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের যে উন্নয়ন করেছেন, সেই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আমরা আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও আমাদের নেত্রীকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চাই। এর জন্য আমরা এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করব, কাজ করব। পাশাপাশি দেশদ্রোহী, ঘাতকদের দল, সন্ত্রাসীদের দল, বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা সজাগ থাকব।

সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বিএনপি অনেক কথা বলে। তাদের নাকি স্পেস দেওয়া হয় না। কিন্তু যে রকম নির্যাতন-নিপীড়ন আমরা সহ্য করেছি, সেটা তারা করেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে তিনবারের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। ১৫ বছর আগে দেশের কি পরিস্থিতি ছিল, আজকে কি অবস্থায় আছে একটু বিবেকের কাছে প্রশ্ন করবেন।


একাত্তরের ঘাতক, বিএনপি, জামায়াত আজকে দেশের সমস্ত উন্নয়নকে থামিয়ে দিতে চায় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিরুদ্ধে গিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করছেন। সরকার বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরোধিতাসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিকল করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি দেশের মানুষের কাছে না গিয়ে বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়েছে, যে বাসনা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ প্রতিনিধিদের ঢাকায় এনেছিলেন, সেই বাসনা তাদের পূর্ণ হয়নি। বিদেশিরাও এখানে এসে প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পেরেছেন, অনুধাবন করেছেন, একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বদ্ধপরিকর।

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন- নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করবে। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে সবদিক দিয়ে সহযোগিতা করবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য, কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করবে না। প্রধানমন্ত্রী বারবার এ অঙ্গীকার করেছেন। আজকে বিদেশি যারা এসেছেন, তারা বুঝতে পেরেছেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বদ্ধ পরিকর।

কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। এরা সরকারকে পদত্যাগ করতে বলে। পদত্যাগ করার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো প্রশ্নই উঠে না। কারণ ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ছিল। এমন অনির্বাচিত সরকারের বাংলাদেশে আসার কোনো সুযোগ নেই।

নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে যারা জয় লাভ করবে, সেই সরকারের কাছে, সেই দলের নেতার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটিই সংবিধানের কথা। এর আগে পদত্যাগ করার প্রশ্নই উঠে না। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

তিনি আরও বলেন, আপা (সাহারা খাতুন) যেভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছিলেন, সেভাবে ঐক্যবদ্ধের রাজনীতি আমরা করব। সবাই এক্যবদ্ধ থাকব। তিনি সবসময় ঐক্যের রাজনীতি করেছেন। সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাহারা আপা। কোথাও বিভেদ করতে যাননি তিনি। কোথাও বিভেদের রাজনীতি তিনি করেননি। তিনি ঐক্যের রাজনীতি করেছেন। নেত্রীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস-শ্রদ্ধা ও দলের প্রতি অত্যন্ত একাগ্রতার রাজনীতি করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি অ্যাড. মো. আসাদুজ্জামান দুর্জয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. কাজী মো. নজিবুল্লাহ্ হিরু। এছাড়া আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবদুল্লাহ আবু, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ঢাকা বার শাখার সাবেক সভাপতি অ্যাড. শেখ হেমায়েত হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাড. জগলুল কবির ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাড. আনিসুর রহমান।