পশ্চিমা মিডিয়ার মিথ্যাচার, ইসরায়েলপ্রীতির অভিযোগ

অবরুদ্ধ গাজায় নৃশংসতার এক বছর

পশ্চিমা মিডিয়ার মিথ্যাচার, ইসরায়েলপ্রীতির অভিযোগ

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধের তথ্য সম্প্রচার নিয়ে কাজ করেছেন সিএনএন ও বিবিসির এমন ১০ জন সাংবাদিক। তারা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের বিরুদ্ধে বার্তাকক্ষে ইসরায়েলি পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ তুলেছেন। ঘটনাস্থল থেকে যে প্রতিবেদন বার্তাকক্ষে আসত, প্রকাশের ক্ষেত্রে তা ইসরায়েলি স্বার্থ রক্ষার নীতি মানা হতো। যা সাংবাদিকতার নীতি বর্হিভূত।

ইসরায়েলি নৃশংসতায় নিহতের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তথ্য হ্রাস করতে প্রতিবেদনে হস্তক্ষেপ করতেন বলে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ এডিটরকে অভিযুক্ত করেছেন। নিজেদের প্রতিবেদনকের সর্তকর্তা সত্ত্বেও সিএনএন ইসরায়েলের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। ওই সাংবাদিকরা আল-জাজিরার দ্য লিসেনিং পোস্টের সাথে কথা বলেছেন। সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানটির ডকুমেন্টারি ‘ফেইলিং গাজা: বিহাইন্ড দ্য লেন্স অফ ওয়েস্টার্ন’।
সিএনএনের সাংবাদিক অ্যাডাম  (ছদ্মনাম) জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলি আগ্রাসনকে সমর্থন করে এমন শব্দ ও বাক্য তিনি সংবাদে দেখতে পান। যা তার হৃদয়ে আঘাত করেছে। কিছু কিছু সময় সিএনএন কঠোর চাপ সৃষ্টি করায় খুশি হয়েছিলেন তিনি। তবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিন্তু ভারসাম্যের জন্য অনেক স্পষ্ট বিষয়েও মিথ্যা বলতে হয়, যা সম্পূর্ণ সত্য বিরুদ্ধ’।
সিএনএন-এর ‘বিব্রতকর মুহূর্ত'
 
সিএনএন ইন্টারন্যাশনালের কূটনৈতিক সম্পাদক নিক রবার্টসন গত নভেম্বরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাথে গাজার বোমা বিধ্বস্ত আল-রান্টিসি চিলড্রেনস হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি দাবি করেন যে, হামাস ইসরায়েলি বন্দীদের আড়াল করতে হাসপাতালটি ব্যবহার করছে। এবং তারা প্রমাণ পেয়েছে। হাগারি রবার্টসনকে আরবি ভাষায় লেখা দেয়ালে একটি নথি দেখান। বলেন, এটি হামাস প্রহরীদের তালিকা। যারা বন্দীদের ওপর নজরদারি করছে।‘
অ্যাডাম সিএনএনের এই সম্প্রচারকে ‘বিব্রতকর মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি মোটেও হামাসের তালিকা ছিল না। বরং এটি একটি ক্যালেন্ডার ছিল, আর আরবিতে মূলত সপ্তাহের দিনগুলো লেখা ছিল। কিন্তু নিক রবার্টসনের কাছ থেকে আসা প্রতিবেদনে ইসরায়েলের দাবিকে সমর্থন করা হয়েছে।’
বিষয়টি আরও নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপনের জন্য সিএনএনে সম্প্রচারের আগেই ইসরায়েলি দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তাতে আরবি ভাষাভাষীরা এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানান। তবে সিএনএন ও আল-জাজিরার একাধিক সাংবাদিক এবং একজন ফিলিস্তিনি প্রযোজক রবার্টসন-সহ তার সমকর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। 
টেলিভিশনে প্রতিবেদনটি প্রচার হওয়ার পর তারা বলেছিল যে, অন্য একজন প্রযোজক এটি অনলাইনে পোস্ট করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ফুটেজ সংশোধন করা। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ভুলবশত পোস্ট করেছিলেন। অথচ একজন সহকর্মী প্রতিবেদনটি দেখার পর নিকের কাছে প্রশ্ন করেন। নিক স্পষ্টতই বলেছিলেন, ‘আপনি কি বলতে চাচ্ছেন হাগারি আমাদের মিথ্যা বলেছে?’
অ্যাডম বলেন, ‘এটি ডিলিট করার সুযোগ ছিল। কিন্ত নিক অনড় ছিল, নিঃসন্দেহে তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ সংবাদদাতা। যদি দেখেন আপনার সহকর্মী ইসরায়েলি সরকারকে বিশ্বাস করছে, তাহলে আপনার হাতে অন্তত থাপ্পড় মারা উচিত। কারণ আপনার রিপোর্টিং ইসরায়েলি এজেন্ডাকে কভার দিয়েছে।’ আল-রান্টিসি হাসপাতালে বন্দীদের আটকে রাখার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অ্যাডাম আরও বলেন, একটা সময় ছিল যখন সিএনএন সাংবাদিকরা ‘ইসরায়েলিদের কাছ থেকে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গাজায় বিমান হামলা নিয়ে লিখতে পারত না’। তবে আমরা অন্য কোনো ক্ষেত্রে এটা করব না। রাশিয়ানদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করব না যে, তারা কিয়েভের হাসপাতালে বোমা মেরেছে কিনা।
সম্প্রতি যখন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ঘোষণা করলেন ইসরায়েলি হামলায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তখন সিএনএন-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাইক ম্যাকার্থি আমাদের ‘হামাসকে জবাবদিহি করার’ নির্দেশ দেন।