পুলিশের মামলা, নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বুধবার দেশব্যাপী বিএনপির বিক্ষোভ
আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: পুলিশের মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা, পুলিশী নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী ৩০ নভেম্বর বুধবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পুলিশের মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা, পুলিশী নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী ৩০ নভেম্বর বুধবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে (মহানগরগুলোতে) বিএনপি’র উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
তবে রাজশাহী ও কুমিল্লা বিভাগীয় সদর উক্ত কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের উদগ্র ক্ষমতালোভের কারণে তারা জনগণের প্রতি অমানবিক অবজ্ঞা করে আসছে। এরা গণতন্ত্রের প্রাণ হরণ করে গোটা জাতিকে খন্ড-বিখন্ড করেছে। দেশে চলছে এক ভয়াল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লক্ষ্য হচ্ছে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তার তাদের জন্য অপরিহার্য। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবন-যাপনকে নির্বিঘœ রাখতেই ক্ষমতার আড়ালে মহাদুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। গণতন্ত্রকে কঙ্কালে পরিণত করে দেশ ও জনগণের ভবিষ্যতকে বরবাদ করার জন্যই চিরস্থায়ী ক্ষমতার বলয় তৈরীর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। অবৈধ সরকারের রক্তচক্ষুর দানবীয় তান্ডবে বিরোধী দল, ভিন্ন মত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার সবকিছুকেই ডাকাতি করা হয়েছে। শেখ হাসিনর উন্মাদ লীলায় গ্রামে-গঞ্জে-হাটে-ঘাটে-বন্দরে-
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত। একতরফা ও নিশিরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী সরকার এখন আন্তর্জাতিকভাবেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাঁর কারণেই বাংলাদেশের গৌরবোজ্জল মুখমন্ডল ম্লান হয়েছে। বর্তমান বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে জনগণের যে নবতরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে প্রধানমন্ত্রী আরও বেশী ক্রোধে-ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। জনতার এই উত্তাল ঢেউ দেখে শেখ হাসিনা শঙ্কিত হয়ে মনে করছেন-ঘুষ-দুর্নীতি-পুঁজি লুন্ঠনের যে অভয়ারণ্য তৈরী করেছেন বাংলাদেশে সেটি হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে। সে কারণেই বিরোধী কর্মসূচিতে দলীয় ক্যাডার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে গেস্টাপো বাহিনীর মতো হত্যার লাইসেন্স দিয়ে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ লজ্জা-শরম হারিয়ে এখন স্বঘোষিত দেশ নেতা হয়েছে। অনাহার, অর্ধাহার, ডেঙ্গ ও রোগ-শোকে ধুকছে দেশের লোক, ঝরছে শিশুর প্রাণ, সারাদেশ উদ্বেগ-উৎকন্ঠিত। মানুষের স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকারকেও এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক নিরন্তর অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার জমিদারী শাসনে গণতন্ত্র মরনাপন্ন। দেশের জনগণ এখন পরাধীন। মামলা-হামলা, ধরপাকড় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম কেড়ে নেয়া হয়েছে, তারা কেউ বাড়ীতে অবস্থান করতে পারছেন না। বাসা ও বাড়ীর মহিলা সদস্যরা পর্যন্ত পুলিশী অসদাচরণের শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। রাজবন্দীদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রাখা। ভিন্নমতের প্রতি এই সরকারের আক্রমণাত্মক আচরণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রতিবাদী স্বরকে থামিয়ে দেয়া, বিরুদ্ধ মত পেশের কোন পথ না রাখা। দেশের জনগণ এখন রাগ-ঘৃনা ও প্রতিবাদের আগ্নেয়গিরি হয়ে আছে। বর্তমান শাসগোষ্ঠীর অনাচার চলতে থাকলে যেকোন সময় প্রতিশোধের অগ্ন্যুৎপাতের মহাপ্লাবন বয়ে যাবে।
সারাদেশে হামলা-মামলা-গ্রেফতারের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গতকাল নরসিংদী জেলা বিএনপি’র সদস্য আওলাদ হোসেন মোল্লাা, রায়পুরা উপজেলা যুবদল নেতা নুর আহমেদ চৌধুরী মানিক, হুমায়ুন কবির, ছাত্রদল নেতা সামসুজ্জামান জয় পোস্টার বিতরণের সময় জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বাড়ী বাড়ী গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এর আগেও বিএনপি’র সাত জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নরসিংদী জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী’র বাসায় পরিকল্পিতভাবে হানা দিয়েছে পুলিশ। অথচ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শিবপুরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এর দায় চাপাচ্ছে মঞ্জুর এলাহীর ওপর। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল নেতা মহিব উল্লাহ খোকন, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা জহিরুল ইসলাম গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া সোনারগাঁও থানা ছাত্রদল নেতা জাকারিয়া ভুঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সালাউদ্দিন সালু ও যুবদল নেতা শহীদুর রহমান স্বপন এর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাড়ীতে বাড়ীতে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে, বাড়ীর লোকজনদের সাথে অশালীন আচরণ করছে। বগুড়ার ধুনটে ককটেল ফাটিয়ে নাশকতার মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগে বিএনপি ও যুবদলের ২ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।এছাড়া একই অভিযোগে ধুনট উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম মামুন, সদস্য হায়দার আলী হিন্দোল, সাবেক পৌর মেয়র আলিমুদ্দিন হারুন মন্ডল, সাবেক পৌর প্রশাসক আকতার আলম সেলিম ও আবুল মনছুর পাশাসহ উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ ৪৬ জন নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে।
এই মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-ধুনট উপজেলার মথরাপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক রেজাউল করিম ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক উজ্বল হোসেন। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে এই ধরণের ন্যাক্কারজনক তৎপরতা চালাচ্ছে আওয়ামী অবৈধ সরকার। গতকাল রাতে গাজীপুর মহানগরের মেট্রো থানা বিএনপি নেতা ও কাউন্সিলর হান্নান মিয়ার হান্নুর কার্যালয় পুলিশ ঘেরাও করে ছাত্রদল নেতা আরিফ, নাঈম, রনি, শাওন, যুবদল নেতা নাজমুল সরকার, আসলাম, লিটন ও লিয়াকতকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আমি এই ধরণের অপতৎপরতায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews