প্রাণিসম্পদ ভ্যানের পেছনে দীর্ঘ লাইন ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে

প্রখর রোদে রোজা রেখে সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম কিনতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ফ্রিজার ভ্যানের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শ’ দেড়েক মানুষ

প্রাণিসম্পদ ভ্যানের পেছনে দীর্ঘ লাইন ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে
প্রাণিসম্পদ ভ্যানের পেছনে দীর্ঘ লাইন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: প্রখর রোদে রোজা রেখে সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম কিনতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ফ্রিজার ভ্যানের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শ’ দেড়েক মানুষ। তাদের একজন আবুল হোসেন। থাকেন তেজগাঁও। কিনতে এসেছেন গরুর মাংস ও ডিম। তবে, সিরিয়ালে যখন তার অবস্থান ২০ নম্বর, তখন জানতে পারেন গরু ও খাসির মাংস শেষ। তামিম বলেন, সাড়ে এগারোটা থেকে লাইনে অপেক্ষা করছি। রোজার সময় কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থেকেও যদি পণ্য না পাওয়া যায়, সেটা খুবই কষ্টের। দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিয়ম না মেনে এক কেজির জায়গায় দুই কেজি মাংস, দুই লিটারের জায়গায় পাঁচ লিটার পর্যন্ত দুধ বিক্রি করেছে। ডিমের ক্ষেত্রেও একই ঘটছে। এজন্য আমরা মাংস পাচ্ছি না। তিনি বলেন, মাংসের যে দাম তাতে কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এ জন্য কম দামে এখানে কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু পেলাম না। মাত্র ১০০ কেজি গরুর মাংস দেয়া হচ্ছে। এই মাংস কতজনকে দিবে? তার কথা- প্রতিটি পণ্যের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।  

বাজারে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বিক্রি করা গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে ৫৫০ টাকায়। একইভাবে ৯০০ টাকার খাসির মাংস ৮০০ টাকায়, ৮৫ টাকার দুধ ৬০ টাকায়, ৩৮ টাকা হালির ডিম ৩০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। ফলে এখান থেকে কিনতে পারলে কিছু টাকা সাশ্রয় করা যাচ্ছে। এমন হিসাব করেই এসব পণ্য কিনতে সকাল ১১টায় প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্যানের পেছনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আক্তার হোসেন। জানান, তিনি এক কেজি গরুর মাংস, দুই কেজি দুধ ও দুই হালি ডিম কিনেছেন। তিনি জানান, পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত। এত কম পণ্য দিয়ে লাখ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ করা কঠিন।

রাজেদুল ইসলাম বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সুলভমূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি করা হবে। কিন্তু কোথায় বিক্রি করা হবে, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো স্থানের কথা উল্লেখ করেনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এজন্য অনেক ঘুরতে হয়েছে তার। উপায় না পেয়ে তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যান বিক্রির স্থান সম্পর্কে জানতে। যতক্ষণে তিনি বিক্রয় স্থানে এসেছেন ততক্ষণে মাংস ও ডিম শেষ। শুধুমাত্র দুধ কিনতে পারেন তিনি। বলেন, কখন কোথায় পণ্য বিক্রি করা হবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানান নি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। অফিস থেকে আমাকে জেনে আসতে হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটেও ঢোকা যায় না। আমি শুধুমাত্র দুধ পেয়েছি। ডিম কিনতে পারিনি। খুবই কম সংখ্যক জিনিস দেয়া হচ্ছে। আরও বাড়ানো উচিত। তাহলে সবাই পেতো।

বিক্রয়কর্মীরা জানান, ভ্যানে যে পরিমাণ পণ্য আছে তা দিয়ে সবাইকে পণ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ১০০ কেজি গরুর মাংস, ১০ কেজি খাসির মাংস, ১০০টি ব্রয়লার মুরগি, ২০০ লিটার দুধ ও ৯০০টি ডিম দেয়া হচ্ছে। ফলে সবাইকে পণ্য দেয়া সম্ভব না। নিয়ম মেনে সবাইকে পণ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে টিকিট বিক্রির সময় ৫ লিটার পর্যন্ত দুধ, ৪০টি ডিম ও ২ কেজি মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রসঙ্গত, রমজান মাসে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজার ভ্যানের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিপণনের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পহেলা রমজান থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প এ বিক্রয় কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে। রাজধানীতে মোট ১০টি স্পটে কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল বুধবার থেকে আরো ৪টি স্পটে বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom