পাওনা টাকা না পেয়ে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে বন্ধুকে খুন
গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ এ তথ্য জানান।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বন্ধুকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে হত্যার অভিযোগে মূল পরিকল্পনাকারীসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- তাইজুল ইসলাম ওরফে কাজল (৩২) ও তার সহযোগী এমারত হোসেন (৩৮)। গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও চালক রিফাত ও কাজল পূর্বপরিচিত এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। মাসখানেক আগে ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
রিফাত পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হন কাজল। ক্ষোভ থেকেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কাজল। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ই জুন তুরাগ নদীতে রিফাতসহ ঘুরতে যায় কাজল। সেখান থেকে রাতে ফেরার আগে তর্ক-বিতর্কের মধ্যে রিফাতকে মারধর করা হয়। এরপর মাঝির সহযোগিতায় রিফাতকে হাত-পা বেঁধে তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, গত ৬ই জুন বিকালে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন রোদ্রপুর এলাকায় তুরাগ নদীতে একটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে সেটি পরিবার সূত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হয় মরদেহটি রিফাতের। ওই ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী কাজলসহ দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-১ জানিয়েছে, পাঠাও চালক রিফাতকে বাসা থেকে ডেকে গুম করার উদ্দেশ্যে তুরাগ নদীতে ডুবিয়ে খুন করা হয়। এর মূল পরিকল্পনাকারী কাজল।
র্যাবের কর্মকর্তা বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর ভুক্তভোগীর পরিবার মুখমণ্ডল ও পরিধেয় বস্ত্র দেখে মরদেহটি শরীফ হোসেন রিফাতের (২০) বলে শনাক্ত করে। ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা মো. ফারুক বাদী হয়ে জিএমপি’র গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের জন্য র্যাব-১ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
গত রোববার রাতে র্যাব-১ এর একটি দল ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি তাইজুল ইসলাম ওরফে কাজলকে গ্রেপ্তার করে। তিনি টঙ্গী পূর্ব থানার আব্দুর রশিদের ছেলে। কাজলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিফাত হত্যায় সহযোগী নৌকার মাঝি এমারত হোসেনকে গাজীপুরের গাছা থানাধীন পলাশোনা খেয়াঘাট এলাকা থেকে একই রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার তাইজুল ইসলাম কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রিফাত ও কাজল পূর্ব পরিচিত এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আনুমানিক এক মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। রিফাতের পরিবারের বক্তব্য কাজল ২০ হাজার টাকা পেতো। আর কাজলের দাবি পাওনা টাকার পরিমাণ ২৭ হাজার। রিফাত পাওনা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কাজল ক্ষিপ্ত হয়।
রিফাতকে শায়েস্তা করতে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ই জুন বিকাল পাঁচটার দিকে কাজল তার সহযোগী সোহাগের সহায়তায় রিফাতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে তার বাসা থেকে ডেকে এনে তুরাগ নদী পার হয়ে তারা সাতাশকান্দি চরে যায়।
মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা নদীর অপর পাশ থেকে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এ সময় ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা তুলে নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়ায় কাজল। একপর্যায়ে কাজল ও সোহাগ দু’জন মিলে রিফাতকে কিল-ঘুষি মেরে নদীর পাড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। কাজল জালের রশি দিয়ে ভুক্তভোগীর হাত বেঁধে ফেলে।
খেয়া ঘাটের অপর পাড়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাঝি এমারত হোসেনকে ডেকে আনা হয়। কাজল ও সোহাগ মিলে রিফাতকে টেনে-হিঁচড়ে ধরাধরি করে নৌকায় উঠায়।
নৌকা মাঝ নদীতে নিয়ে রিফাতকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে দেয়া হয়। তিনি বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে তারা সেখান থেকে দ্রুত ঘাটে চলে আসে। স্থানীয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ভয়ে রিফাতের রেখে যাওয়া মোটরসাইকেল রেখে হেঁটে কিছুদূর এসে ইজিবাইকে করে যে যার বাড়িতে চলে যায়।
রিফাতের পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করলে কাজলসহ তিনজনই আত্মগোপনে চলে যায়। কাজলের বিরুদ্ধে গাজীপুর কোর্টে ও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন ও তদন্তাধীন আছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।