নির্বাচনে পুতিনের প্রতিপক্ষ কে এই ইয়েকাতেরিনা
তিনি পুতিনকে হারিয়ে দিয়ে রাশিয়ার ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসীও।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচন করবেন এটাই ধারণা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে নির্বাচনে তার সম্ভাব্য এক প্রতিদ্বন্দ্বীর উত্থান হয়েছে। তিনি পুতিনকে হারিয়ে দিয়ে রাশিয়ার ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসীও।
রুশ রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করা এই নারীর নাম ইয়েকাতেরিনা ডান্টসোভা। গত সপ্তাহে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। নিজের এমন বড় সিদ্ধান্ত নেয়া প্রসঙ্গে ইয়েকাতেরিনা বলেন, আমি আমাদের দেশকে ভালোবাসি। আমি চাই রাশিয়া একটি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হোক। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের দেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে এগোচ্ছে। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা পোস্টে ইয়েকাতেরিনা বলেন, আমি বুঝি যে অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হবে, আসুন অন্তত চেষ্টা করা যাক। এই নির্বাচনে জয়ের চেষ্টা করে দেখি একবার!
৪০ বছরের এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তিন সন্তানের মা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে হলে তাকে খুব সম্ভবত ভ্লাদিমির পুতিনকে হারাতে হবে। সর্বশেষ নির্বাচনে পুতিনের সমর্থন কিছুটা কম দেখা গেলেও গত দুই দশক ধরে জনপ্রিয়তায় তার কাছাকাছিও কেউ আসতে পারেনি। বিশ্বের কাছে রাশিয়া মানেই এখন পুতিন। ৭১ বছর বয়স্ক পুতিন হয়ত শিগগিরই নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেবেন।
কিন্তু ইয়েকাতেরিনা বিশ্বাস করেন, তার বয়স ও লিঙ্গের কারণে তিনি অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন এবং তিনি চমক দেখানোর জন্য প্রস্তুত। মস্কো টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে আলাদা। কারণ আমি স্থানীয় রাজনৈতিক বক্তৃতায়, স্থানীয় শাসনের ইস্যুতে বেশি নিমগ্ন থাকি। আমি এই দেশের বেশিরভাগ মানুষের মতোই জীবন পার করছি। ফলে তাদের সমস্ত উদ্বেগ ও তাদের সমস্যা আমার জানা।
তবে এখনও প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করার জন্য বেশ কিছু ধাপ বাকি আছে ইয়েকাতেরিনার সামনে। রাশিয়ার নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তাকে অবশ্যই রাশিয়ার কমপক্ষে ৪০টি অঞ্চল থেকে তিন লাখ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে এবং পর্যালোচনার জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে সেই তালিকা জমা দিতে হবে। তিনি জানান, এরইমধ্যে সেই স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সাইবেরিয়ায় জন্ম নেয়া এই সাংবাদিক মস্কো থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহাসিক শহর জেভে তার সাংবাদিকতা পেশা গড়ে তোলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তার পেশার মাধ্যমেই তিনি সর্বদা রাজনীতিতে নিমগ্ন থাকতেন। ২০১৭ সালে জেভের মেয়র নির্বাচনের জন্য স্থানীয় তৃণমূল প্রচারণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে নামেন তিনি। এরপরই তিনি রাজনীতিতে আরও সামনে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৯ সালে ইয়েকাতেরিনা জেভ শহর থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর এটাই দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রাশিয়ার পশ্চিমাপন্থি প্রধান বিরোধী দল এখনও এই নির্বাচনে তাদের কৌশল কী হবে তা ঠিক করেনি। তারা নিজেদের মধ্যে একজন প্রার্থী নির্বাচনের কথা ভাবছে। আবার কেউ কেউ এই নির্বাচন বয়কট করার প্রস্তাবও দিয়েছে।
তবে ইয়েকাতেরিনা এই পশ্চিমাপন্থি বিরোধীদের পক্ষের কেউ নন। তিনি পুতিন-বিরোধী হলেও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে তার আগমনএকেবারেই নতুন। তিনি আশা করেন, এই দুটি পক্ষের বাইরে থেকেও অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনে যোগ দেবেন। দ্য মস্কো টাইমসের সাথে একটি কথোপকথনে তিনি জানান, তার প্রচারণার মূল স্তম্ভ হচ্ছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি। উল্লেখ করেছেন। ইউক্রেন ইস্যুতে তার অবস্থান যদিও স্পষ্ট নয়। তবে তিনি পুতিনের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির কথা বলেছেন। গত সপ্তাহে তিনি প্রচারণা শুরু করতে আনুষ্ঠানিক টেলিগ্রাম চ্যানেল চালু করেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি সব রাজনৈতিক বন্দিকে বেআইনিভাবে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এরমধ্যে যেসব নারী রাজনৈতিক বন্দী আছেন আমি তাদের জন্য বিশেষভাবে দুঃখিত।
ইয়েকাতেরিনা বলেন, তার তিন সন্তানও তার এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াকে সমর্থন দিচ্ছে। তার ১৯ বছর বয়সী কন্যা বিশেষভাবে তার প্রচারণায় সহায়তা করতে আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, আমি আমার মধ্য দিয়ে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। আমি দেখাতে চাই- কেউ চাইলেই প্রতিরোধ করতে পারে। আমি অন্য লোকেদের আশা দিতে চাই। আমি ভীত নই কারণ - আমার পরিবার এবং প্রিয়জনরা আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা প্রস্তুত, তাই আমিও প্রস্তুত।