নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনু মুহাম্মদ

ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে তার বাঁ পায়ের সবক’টি আঙ্গুল ও ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল পুরোপুরি থেঁতলে গেছে।

নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনু মুহাম্মদ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে তার বাঁ পায়ের সবক’টি আঙ্গুল ও ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল পুরোপুরি থেঁতলে গেছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খিলগাঁও এলাকার খিদমাহ্‌ হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের ব্লক-২ এর অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি এখন বিপদমুক্ত। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 

তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তার সফর সঙ্গী মো. মাহতাব জানান, আনু মুহাম্মদ স্যার ট্রেনে করে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। তাকে বহন করা ট্রেনটি খিলগাঁও এলাকায় পৌঁছে থেমে যায়। বাসা ওই এলাকায় হওয়ায় অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে আহত হন। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের স্ত্রী শিল্পী বড়ুয়া জানান, কয়লা খনির শ্রমিকদের মৃত্যুতে দিনাজপুরে ফুলবাড়িয়ায় একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ শুক্রবার সেখানে যান। শনিবার শোকসভা শেষ করে তিনি গতকাল ট্রেনে চেপে ঢাকা ফিরছিলেন। তার বাসা খিলগাঁওয়ে হওয়ায় ট্রেনের ধীরগতি দেখে তিনি খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় নামতে যান। আর সে সময়ই এই দুর্ঘটনা ঘটে। 

আনু মুহাম্মদের বড় ভাই হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, আনু মুহাম্মদের প্রাথমিক অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। তার পায়ের যেই সেলগুলো ড্যামেজ হয়েছে সেগুলো কেটে ফেলে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি বলেন, তার পরিস্থিতি একটু উন্নতি হলে থেঁতলে যাওয়া তার বাঁ পায়ের সবগুলো আঙ্গুল ও ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের হাড় ও অন্যান্য টিস্যুগুলোর কি করা যায় সে বিষয়ে বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এখনো তার কোনো আঙ্গুল কাটা হয়নি। কিন্তু বাঁ পায়ের আঙ্গুলগুলো পুরো থেঁতলে গেছে। ডান পাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

প্রথমে মাহতাব ট্রেন থেকে নিচে নামে। এরপর আনু মুহাম্মদ নামতে যান। তখন পেছন থেকে আরও দুটো ছেলে আনু মুহাম্মদকে ধাক্কা দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে নেমে যায়। তখন তাদের ধাক্কাতে হোঁচট খেয়ে আমার ভাই পা পিছলে ট্রেনের নিচে চলে যায়। তার পুরো শরীরই তখন ট্রেনের নিচে চলে যায়। মাহতাব তখন তাকে দ্রুত ট্রেনের নিচ থেকে টেনে বাইরে নিয়ে আসেন। এরপরও তার দুই পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় মাহতাব তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে ইমার্জেন্সি ওটিতে তার প্রাথমিক অপারেশন হয়। সেখান থেকে দ্বিতীয়তলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ২০২ নম্বর রুমে রাখা হয়। বর্তমানে ক্যাজুয়ালটি ব্লক-২ এর অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। 

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান কচি মানবজমিনকে বলেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি এখন বিপদমুক্ত। তার একটি অপারেশন হয়েছে। পরবর্তীতে আরেকটি অপারেশন প্রয়োজন হবে। সোমবার তাকে কেবিনে দেয়া হতে পারে। 

ঢামেকের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আনু মুহাম্মদের দুই পায়ের পাতাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। তার সুচিকিৎসায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকেও চিকিৎসকরা এসেছিলেন। ইতিমধ্যে আমরা তার পায়ে একটি প্রাথমিক অপারেশন করেছি। বর্তমানে তিনি পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে আছেন। তার পায়ে আরেকটি অপারেশন বাকি রয়েছে। সেটি সম্পন্ন হওয়ার পরে তাকে কেবিনে দিয়ে দেয়া হবে। বর্তমানে তিনি ভালো অবস্থায় আছেন। ওদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে দেখতে সকাল থেকেই ঢাকা মেডিকেলে ভিড় করেন তার শুভানুধ্যায়ীরা।