দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বিশ্ব জেগে উঠেছে : গয়েশ্বর

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় কিশোরগঞ্জে বন্যা পরবর্তী দুর্গত মানুষের ফ্রি মেডিকেল সেবা এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন গয়েশ্বর।

দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বিশ্ব জেগে উঠেছে : গয়েশ্বর

প্রথম নিউজ, কিশোরগঞ্জ: বাংলাদেশ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সারা বিশ্ব জেগে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 

আজ বৃহস্পতিবার  কিশোরগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের বাংলাদেশ সফরের মধ্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় কিশোরগঞ্জে বন্যা পরবর্তী দুর্গত মানুষের ফ্রি মেডিকেল সেবা এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন গয়েশ্বর। এ সময় বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর নির্যাতন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক এমপি ও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে গুম এবং বুদ্ধিজীবী ও লেখক ফরহাদ মাজাহারের অপহরণ এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে বন্দি অবস্থা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন গয়েশ্বর।’’

তিনি বলেন, বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে আমাদের নেতা তারেক রহমানের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে তার কোমর ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। সেই নির্যাতনের চিত্র সাম্প্রতিক সময়ে নেত্র নেত্রনিউজ আবিষ্কার করেছে। 

গয়েশ্বর বলেন, আমরা আগে শুনতাম বিভিন্ন জেলা, থানা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের টর্চার সেল আছে। কিন্তু তারেক রহমানকে সরকার চালিত টর্চার সেলে নির্যাতন করা হয়েছিল। সেই সেল এখনও আছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে শোনা যায়। আপনারা হয়তো জানেন না  সেখানে অনেক অজানা মানুষ এখনও আটক আছে। মাঝে মধ্যে এক-দুইজন ছাড়া পেলেও তারা কথা বলে না, চুপচাপ দেশ থেকে বেরিয়ে যায়।

বুদ্ধিজীবী ও লেখক ফরহাদ মাজাহার অপহরণ প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, কয়েক বছর আগে বুদ্ধিজীবী ও লেখক ফরহাদ মাজাহারকে ঢাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাকে খুলনা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। অপহরণকারীদের সাথে পুলিশের ঝগড়া হয়েছিল সেদিন। তাহলে অপহরণকারীরা কারা? তারা দেশী নাকি ভিনদেশী? অর্থাৎ ভিনদেশীরাও আমাদের দেশের মানুষ তুলে নিয়ে যায়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সাবেক এমপি ও আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এম ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। তাকে কারা নিয়েছে এবং কোথায় নিয়েছে? আজ পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি।

‘‘এই সরকারের আমলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৬‘শ অধিক নেতা-কর্মীকে গুম এবং সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং অসংখ্য নারী ও শিশু নির্যাতন করা হয়েছে।’’  

উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে তিনি দাবি করেন, জনগণের নেত্রী খালেদা জিয়া আজ গৃহবন্দি। জনগণের নেত্রী যদি গৃহবন্দি থাকে; জনগণও মুক্ত থাকতে পারে না। জনগণের দুর্দশা দেখার কে দেখবে। যিনি আমাদের নিয়ে এখন কাজ করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে নিজ জন্মভূমি ছেড়ে তাকে লন্ডনে থাকতে হচ্ছে। সেখানে তিনি শখ করে যাননি। নির্যাতনের কারণে গুরুতর অবস্থায় জীবন রক্ষায় চিকিৎসার জন্য তাকে সেখানে যেতে হয়েছে। 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তারপরও আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের পাশে ছিলাম এবং আছি। গত করোনাকালে দেশের সর্বত্র আমরা ফ্রি মেডিকেল সেবা, ঔষধ, অক্সিজেন এবং দুস্থ মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। বন্যাকালেও আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরাও যে ভালো আছি তা নয়। আমাদেরও কষ্ট করতে হয়। আমাদের প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এই মামলার টাকাও জোগাড় করতে অনেক কষ্ট হয়।
 
‘‘গত দশ বছরে দেশ থেকে দশ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই টাকা কারা পাচার করেছে, এই টাকার উৎস কী? এর উৎস হচ্ছে মেগাপ্রজেক্ট, বিদ্যুৎ খাত এবং স্বাস্থ্যখাত। এখান থেকে লুটপাট করে টাকাটা পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা উধাও হয়ে গেল তার কোনো হদিস নেই।’’

তিনি আরো বলেন, আজ ব্যাংকে টাকার ঘাটতি। যারা ব্যবসা করেন, তারা আগে এলসি খুলতে গেলে ৫ থেকে ১০ শতাংশ দিতে হতো, কিন্তু এখন তা শতভাগ দিতে হয়। বিদেশেরাও এখন বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বাস করে না। 

বিভিন্ন দেশ বা সংস্থা থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে সেই টাকার কিস্তি ও সুদ আগামী বছর থেকে দিতে হবে বলে জানান গয়েশ্বর। কাবলি ওয়ালাদের গল্প করে তিনি বলেন, বিদেশিরাও আমাদের কাছে আসল টাকা নয়; তারা সুদ চাইবে। সেই টাকা দেওয়ারও সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে সব কিছু দাম বাড়ছে কিন্তু আওয়ামী লীগের দাম কমছে। এখন তা শূন্যের কোঠায়। যেখানে আওয়ামী লীগ থাকে সেখানে গণতন্ত্র থাকে না। এই অবস্থায় আমাদের লড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই নয়। আমাদের লড়াই হচ্ছে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই। আমাদের লড়াই হচ্ছে গণতন্ত্র ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এই লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom