তরুণীকে গাড়ির নিচে হিঁচড়ে নিয়ে গেল একদল মদ্যপ যুবক
অঞ্জলি সিংয়ের মৃত্যুর প্রতিবাদে দিল্লিতে বিক্ষোভ
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ইংরেজি নতুন বছরের রাতে ২০ বছরের এক তরুণীকে গাড়ির নিচে প্রায় দশ-বারো কিলোমিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলার পর স্তম্ভিত নগরবাসী প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই গাড়ির চালক ও আরোহী– যারা সবাই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন– তারা নাকি বুঝতেই পারেননি তাদের গাড়ির নিচে কিছু চলে এসেছে। তারা ভেবেছিলেন, 'খারাপ রাস্তায় বাম্পের জন্য গাড়ি ওরকম লাফাচ্ছে!' খবর বিবিসির। ওই গাড়ির চালক-সহ মোট পাঁচজন আরোহীকেই পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে – যারা জেরার মুখে স্বীকার করেছেন ওই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত দেহ গাড়ির নিচে আবিষ্কার করার পর তারা সেটিকে রাস্তায় ফেলেই গাড়ি নিয়ে পালিয়েছিলেন। দিল্লির কানঝাওয়ালা এলাকায় যখন ওই তরুণীর মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তখন তার পরনে কোনও কাপড় ছিল না, পিঠ ও একটা পা-ও ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে!
অঞ্জলি সিং নামে নিহত ওই তরুণীর পরিবার অভিযোগ করেছে, মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। দিল্লি পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। এদিকে ২০২৩ সালের প্রথম রাত্রেই রাজধানীর বুকে এই মর্মান্তিক ঘটনা শহরে তুমুল আলোড়ন ফেলেছে, সাধারণ মানুষ বিশ্বাসই করতে পারছেন না কীভাবে এমন একটা করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। দিল্লির যে থানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে, সেই সুলতানপুরী পুলিশ স্টেশনের সামনে সোমবার দোষীদের কঠোরতম সাজার দাবিতে বহু মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, এটি একটি ‘'বিরলের মধ্যেও বিরলতম’' অপরাধ এবং এই ঘটনায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা মন্তব্য করেছেন, এই চরম অমানবিক ঘটনায় তার মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্ত পাঁচজনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে।দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও দিল্লি পুলিশের কাছে এই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। স্পেশাল কমিশনার শালিনী সিংয়ের নেতৃত্ব দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, অঞ্জলি সিংয়ের দেহটি যে গাড়ির নিচে ঢুকে গিয়েছিল, সেটি ছিল একটি মারুতি বলেনো এবং দুর্ঘটনার সময় গাড়িটিতে মোট পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। এই পাঁচজনের সবাইকেই পুলিশ এখন গ্রেপ্তার করেছে।হিট অ্যান্ড রানে অভিযুক্ত এই পাঁচজন হলেন- দীপক খান্না (২৬), অমিত খান্না (২৫), কৃষণ (২৬), মিঠুন (২৫) ও মনোজ মিত্তাল।
দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি অভিযোগ করেছে, অভিযুক্ত মনোজ মিত্তাল স্থানীয় বিজেপির নেতা এবং সে এই ঘটনায় জড়িত বলেই পুলিশ ও প্রশাসন তদন্তে গড়িমসি করছে। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হরেন্দর সিং জানিয়েছেন, বাকিদের মধ্যে দীপক খান্না গ্রামীণ সেবার একজন ড্রাইভার, অমিত খান্না স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কর্মী। কৃষণ দিল্লিতে স্পেনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মী এবং মিঠুন পেশায় একজন হেয়ারড্রেসার। অভিযুক্তরা ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই তাদের এক পরিচিত বন্ধুর কাছ থেকে বলেনো গাড়িটি ধার করেছিল।
এদিকে দিল্লির একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্মী অঞ্জলি সিং একটি হোটেলে ডিউটি সেরে রাত ২টার দিকে স্কুটারে চেপে বাড়িতে ফিরছিলেন। পুলিশের তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, বলেনো গাড়িটির সঙ্গে ওই স্কুটারটির ধাক্কা লাগলে অঞ্জলির শরীর কোনওভাবে গাড়িটির নিচে চলে যায় এবং গাড়ির অ্যাক্সল ও চাকার মাঝ আটকে যায়। ওই অবস্থাতেই গাড়িটি বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়, বেশ কয়েকবার ইউ-টার্ন পর্যন্ত নেয়– কিন্তু গাড়ির আরোহীরা কেউ থেমে একবার দেখেনওনি নিচে কিছু আটকে আছে কি না। ওই কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্তরা জেরার মুখে বলেছে তাদের গাড়ির সব কাঁচ ওঠানো ছিল আর ভেতরে জোরে জোরে গান বাজছিল। ফলে তারা নাকি টেরই পায়নি নিচে কিছু চাপা পড়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews