ডিমের রেকর্ড দাম: স্বস্তিতে খামারিরা, অস্বস্তি ক্রেতার
খামারিরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি হালি ডিম ৪০ থেকে ৪১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে দাম বাড়তে থাকে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এখন খামারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়।
প্রথম নিউজ, পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডিমের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে হালিপ্রতি দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৬ টাকা। খামারে এখন এক হালি ডিম ৪৮ টাকা, আড়তে ৪৯ টাকা ও খুচরা বাজারে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা স্বস্তিবোধ করলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা।
খামারিরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি হালি ডিম ৪০ থেকে ৪১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে দাম বাড়তে থাকে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এখন খামারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। তারা জানান, চলতি বছর প্রতি পিস ডিম ৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। এরপর প্রতি পিস ডিমের দাম ৮ থেকে ১০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। বর্তমান বাজার দরেও খামারিরা খুব বেশি লাভবান হচ্ছে না। তবে ডিমের এই বাজারদরে অন্তত লোকসান গুনতে হচ্ছে না খামারিদের।
উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের বাগবাড়িয়া গ্রামের শাহানাজ পোল্ট্রির স্বত্বাধিকারী সফর আলী বিশ্বাস বলেন, ১০০ ডিম ১ হাজার ১৭০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা। অর্থাৎ প্রতি হালি ডিম ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ১৫ দিন আগেও খামারে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অতীতে কখনো এত বেশি দামে ডিম বিক্রি হয়নি।
তিন বলেন, ১২ টাকা পিস ডিম বিক্রি করেও খামারিরা খুব বেশি লাভবান হবে না। যারা খামারি তারা নিশ্চয় জানেন এক হাজার মুরগির একটি খামার করতে শেড ও খাঁচাসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়। তাছাড়া মুরগির খাবার ও বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকসানের মুখে পড়ে অসংখ্য খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ৪৮ টাকা হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে, এটি খুব বেশি দাম বলে আমার কাছে মনে হয় না। এ দাম বছরজুড়েই থাকা উচিত। তাহলে অন্তত লোকসান থেকে খামারিরা বাঁচবে।
ঈশ্বরদী বাজারের ডিম আড়তের মালিক সাইদুর রহমান টিটু বলেন, খামার থেকে ৪৮ টাকা হালি দরে ডিম কিনতে হচ্ছে। আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি। আমার ১৫ বছরের ব্যবসা জীবনে কখনো ডিমের এতো বেশি দাম দেখিনি। ডিমের ঊর্ধ্বগতি ব্যবসায়ীদের জন্য অস্বস্তিকর। ডিমের দাম বাড়লে খামারিদের লাভ হয়। আর ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের। আড়তদারদের খুব বেশি লাভ-ক্ষতি নেই।
খায়রুল ইসলাম নামে আরেক আড়তদার বলেন, প্রতি পিস ডিম আড়তে ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ১০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ ডিমের দাম ১ হাজার ২১০ টাকা। ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে।
এদিকে ঈশ্বরদী বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা মুদি দোকানি ঝন্টু স্টোরের মালিক ঝন্টু রহমান বলেন, ১৪-১৫ দিন হলো ডিমের দাম বেড়েছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা ডিম কিনতে এসে নানা কথা বলছেন। তারা ডিমের দাম বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না।
বাজারে ডিম কিনতে আসা হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, ডিমের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগে ৪৫ টাকা হালি ডিম কিনেছি। আজ দোকানদার লাল ডিম ৫৬ টাকা ও সাদা ডিম ৫৪ টাকা হালি হাঁকছেন। অন্য সব খাদ্যসামগ্রীর দাম বেশি। গরিব মানুষ মাছ ও মাংসের চাহিদা ডিম দিয়ে পূরণের চেষ্টা করে। সেই ডিমের দামও বেড়ে গেলো। ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কী কারণ তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদকপ্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন বলেন, ১৫ দিন ধরে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে খামারিদের খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। তবে এটি বলা যায় আপাতত লোকসানের হাত থেকে খামারিরা রক্ষা পেলো। ডিমের এ বাজারদর সবসময়ই থাকা দরকার। তাহলে পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলতে মানুষ আগ্রহী হবে। তা না হলে লোকসানের কবলে পড়ে যেভাবে খামার একের পর এক বন্ধ হচ্ছে আগামীতে হয়তো খামার আর থাকবেই না।