টানা কর্মসূচিতে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগও
আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় যেকোনো সময় রাজপথের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বিরোধী দল ও জোটগুলো।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজপথে হার্ডলাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি, আন্দোলনের বিপরীতে প্রতিরোধ- আপাতত এই নীতিতে এগোবে দলটি। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় যেকোনো সময় রাজপথের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বিরোধী দল ও জোটগুলো। তাই সতর্ক অবস্থানে থেকে রাজপথের কর্মসূচিতে গতি বাড়াতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় যেকোনো কর্মসূচিতে লোক সমাগম বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ১৫ দিনের টানা কর্মসূচি ঘোষণার পরদিনই পাল্টা টানা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুপস্থিতিতেই দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, তাদের দু’জনের পরামর্শেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সভা শেষে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের টানা কর্মসূচির মধ্যে সেপ্টেম্বরেই রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সাতটি সমাবেশ রয়েছে।
আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ২৮শে সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী ও শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিল। ২৯শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা। ২৫শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরায় সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ২৬শে সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জে সমাবেশ করবে ঢাকা জেলা, ২৭শে সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে সমাবেশ করবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ, একইদিন কাফরুলে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ৩০শে সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কৃষক সমাবেশ করা হবে এবং ৪ঠা অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। বিএনপি-জামায়াতের অশুভ তৎপরতা রুখতে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, এটা তাদের ব্যাপার। আশা করছি বিএনপিসহ সবাই অংশ নিবে কিন্তু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে তা মোকাবিলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিএনপি’র পাল্টা কিনা- এমন এক প্রশ্নে হানিফ বলেন, কোনো কাউন্টার কর্মসূচি নয়, নির্বাচন পর্যন্ত এই ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েক নেতা মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোকে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে করার সুযোগ দেয়া হবে না। একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। জনগণের পক্ষের পরীক্ষিত দল। সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। তাই দেশে কেউ অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। বিএনপি’র গতিবিধি ভালো মনে হচ্ছে না। তারা আবার নাশকতার দিকে এগোচ্ছে। তাই রাজনৈতিক মাঠে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর্মসূচি গড়ে তোলা হবে।
এদিকে দলের পাশাপাশি দেশের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান দলটির নেতারা। তারা বলেন, বিএনপি’র আন্দোলনের হুমকি আমলে নেয়া হবে না। সরকার পতনের কর্মসূচি পালনের নামে দেশের স্বাভাবিক পরিবেশের বিঘ্ন সৃষ্টিও করতে দেয়া হবে না। তাই তো বিরোধীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেই জাতীয় নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করতেই মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র একদফা দাবি মানতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সাংবিধানের বাইরে গিয়ে বিএনপি’র কোনো দাবিই আমলে আনা হবে না। উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন।