জনপ্রশাসন সচিবসহ ৪০ সচিবের বিরুদ্ধে রিট
যৌন হয়রানি রোধে হাইকোর্টের রায় কেন বাস্তবায়ন নয়
প্রথম নিউজ, ঢাকা: কর্মস্থল ও শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে জনপ্রশাসন সচিবসহ ৪০ সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন ও মো. শাহিনুজ্জামান রিটটি দায়ের করেন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট কর্মস্থল ও শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে হাইকোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের আদেশ দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন- ইউজিসি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, ‘কমিটিতে কমপক্ষে পাঁচজন সদস্য থাকবেন। কমিটির বেশির ভাগ সদস্য হতে হবে নারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে দুজন সদস্য নিতে হবে। সম্ভব হলে একজন নারীকে কমিটির প্রধান করতে হবে।’ এ বিষয়ে সচেতনতা ও জনমত তৈরির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি শিক্ষাবর্ষের পাঠদান কার্যক্রমের শুরুতে এবং প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সংবিধানে বর্ণিত লিঙ্গ সমতা ও যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা বই আকারে প্রকাশ করতে হবে।’
হাইকোর্টের রায়ে যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় বলা হয়, শারীরিক ও মানসিক যেকোনো ধরনের নির্যাতনই যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে। ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি, যে কোনো ধরনের অশালীন চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে।
শুধু কর্মস্থল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ ধরনের হয়রানি ঘটে না, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটূক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো ইত্যাদি যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য করা হবে। রায়ে আরও বলা হয়, ‘কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন, অশালীন চিত্র, দেয়াল লিখন, আপত্তিকর কিছু করাও যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।’
যৌন হয়রানি রোধে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী ২০১০ সালের ২ নভেম্বর জনস্বার্থে হাইকোর্টে অপর একটি রিট করেন। দীর্ঘদিন শুনানির পর আদালত কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় প্রদান করেন। এছাড়া ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি যৌন হয়রানি বন্ধে সাত দফা নির্দেশনাসহ রায় প্রদান করেন হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের বেঞ্চ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews