চুয়াডাঙ্গার মোকিম ও ঝড়ুর নিয়মিত আপিল অকার্যকর ঘোষণা
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন
প্রথম নিউজ, ঢাকা: জেল আপিল নিষ্পত্তি ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমার প্রার্থনা খারিজ হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার দুই আসামি মোকিম ও ঝড়ুর নিয়মিত আপিল অকার্যকর ঘোষণা করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন আপিল আদালত।
নিয়মিত আপিলের বিষয়ে শুনানি ও আদেশর নির্ধারিত দিনে আজ বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আদালতে না বসায় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ নট টুডে (আজ নয়) বলে আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় সেটি নিয়ে বুধবার আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
মামলায় জেল আপিল নিয়ে ওই আইনজীবী রেগুলার (নিয়মিত) আপিল শুনানি না করায় নিজেদের ভুলের কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন আদালতের কাছে। প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, মৃত্যুদণ্ডের মামলা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখে শুনে রায় দেয়া হয়। এ বিষয়ে আদালতের উপর দোষ দেয়ার চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, আমার সময়ে ২০০৯ সালের থেকে সব মৃত্যুদণ্ডের মামলার আপিল শুনানি হয়েছে, ২০১৩ সালের মামলা কেন আপনি আদালতে আনেননি। পরে ওই আইনজীবী জানান, আসামির পরিবার গরিব হওয়ায় তারা সঠিকভাবে কোনো বিষয় অবহিত করেননি। পরে আদালত মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গায় হত্যা মামলায় আপিল নিষ্পত্তির আগেই দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল জানান এটি সঠিক নয়। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই দণ্ড কার্যকর হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামি মোকিম ও ঝড়ুর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন একই এলাকার সাবেক মেম্বার মো. মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। পরে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, দুইজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- একই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু।
এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। মামলার ডেথ রেফারেন্স নম্বর ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন। বাকি আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট। পরে মোকিম ও ঝড়ু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন।
আইনজীবী হুমায়ুন কবীর বলেন, মোকিমের পরিবার জানায়, ২০১৭ সালে মোকিমের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এমনকি অপর আসামি ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ সুপার মো. কামাল হোসেন সই করা এক ডকুমেন্টে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর মামলায় বিচারিক আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। এরপর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাতে আসামি দুজনের ফাঁসি হয়।
এদিকে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ থেকে জেলার তুহিন কান্তি খান সাংবাদিকদের জানান, খুলনা অঞ্চলের আওতাধীন যশোর কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল।
কারাগার থেকে আরও জানানো হয়, হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের পর মোকিম ও ঝড়ু জেল থেকে আপিল করেছিলেন। সেটি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তাদের আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্য বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: