চট্টগ্রামে ৮ অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই পুলিশের

জানা গেছে, কোটা আন্দোলন ঘিরে সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে।

চট্টগ্রামে ৮ অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই পুলিশের

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবর্ষণকারী অস্ত্রধারী সেই চার যুবককে গ্রেপ্তার তো দূরের ব্যাপার, সহিংসতার কোনো মামলায় আসামি করা হয়নি। এ চার যুবক যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ পরিচয়ধারী। জানা গেছে, কোটা আন্দোলন ঘিরে সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে। এর মধ্যে মুরাদপুর পড়েছে নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায়। বহদ্দারহাট মোড় পড়েছে চান্দগাঁও থানা এলাকায়। আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় ছয়টি এবং চান্দগাঁও থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার একটিতেও অস্ত্রধারীদের কাউকে আসামি না করার বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল মান্নান মিয়া।

বক্তব্য জানতে গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবীর এবং বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

গত ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের মুরাদপুর এলাকায় এবং এর দুদিন পর ১৮ জুলাই বিকেলে নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন শিক্ষার্থীসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে দুজন নিরীহ পথচারী রয়েছে।

নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ১৬ জুলাই মুরাদপুর ও আশপাশ এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে পুলিশ সতর্কাবস্থায় থাকলেও তাদের তরফ থেকে কোনো শক্তি প্রয়োগ করা হয়নি। তবে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিল লক্ষ্য করে চার ব্যক্তিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। গুলি করা সেই চার ব্যক্তির মধ্যে একজন মো. ফিরোজ। তিনি মহানগর যুবলীগের কর্মী। অন্যজন মো. দেলোয়ার। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক। যুবলীগ নেতা পরিচয়ধারী ফিরোজ রিভলবার নিয়ে এবং দেলোয়ার শটগান নিয়ে গুলি করেন। বাকি দুই অস্ত্রধারী হলেন এইচএম মিঠু ও মো. জাফর। এ দুজনও যুবলীগের কর্মী বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ দুজনকে রিভলবার নিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

জানা গেছে, যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া ফিরোজ একসময় শিবিরের ক্যাডার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ১০ লাখ টাকা লুটের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। অবশ্য শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সেদিন (১৬ জুলাই) গুলি ছোড়ার কথা গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করেছেন ফিরোজ।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা ওই তিন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা এবং তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘মুরাদপুরে হতাহতের ঘটনাগুলোয় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার কিংবা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মাধ্যমে পাওয়া সেদিনের হতাহতের ঘটনার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই অস্ত্রধারীদের সচিত্র ছবি, ভিডিও ও রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার আট-দশ দিন পরও কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘সবকিছু এখনই বলার সময় আসেনি। আমরা এখনো সে পর্যায়ে যাইনি।’