কোভিড টিকার ব্যয়ের গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, টিআইবি’র ব্যাখ্যা

করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের ইতিবাচক অর্জনসমূহ এর ধারাবাহিক গবেষণাসমূহে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছে টিআইবি

কোভিড টিকার ব্যয়ের গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, টিআইবি’র ব্যাখ্যা
কোভিড টিকার ব্যয়ের গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, টিআইবি’র ব্যাখ্যা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তিনটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গত ১২ই এপ্রিল ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক সংবাদ সম্মেলনে কিছু মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে টিআইবি।

গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, টিআইবি’র প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২৫শে এপ্রিল দুপুর ১২টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে গবেষণা বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেন। মন্ত্রী তার প্রেস ব্রিফিংয়ে টিকা বাবদ সরকারের ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা নয়, প্রায় ২০ হাজার কোটি বলে উল্লেখ করেন। যা একদিকে তার আগের ঘোষণার সংশোধন এবং অন্যদিকে বাস্তবে টিআইবি’র বিশ্লেষণকেই যথার্থতা প্রদান করে। টিআইবি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী টিকার ক্রয়মূল্য ও টিকা কার্যক্রমের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ১২,৯৯৩- ১৬,৭২১ কোটি টাকা, যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষিত ৪০ হাজার কোটির অর্ধেকের কম। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই খরচ পূর্বে ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রকাশ হয়েছিল বলেও মন্ত্রী সংবাদ ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেছেন।

তবে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, অনুদান হিসেবে যে টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে তার মূল্য যোগ করে তিনি মোট খরচ ৪০ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করেছিলেন। বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে পাওয়া টিকা বাবদ কোন যুক্তিতে ও কিসের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হলো এবং কোন যুক্তিতে তা খরচ হিসেবে বিবেচিত হলো তা বোধগম্য নয়। টিআইবি আশা করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসাব আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।

টিআইবি জানায়, করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের ইতিবাচক অর্জনসমূহ এর ধারাবাহিক গবেষণাসমূহে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছে টিআইবি, যা এই পর্বের গবেষণায়ও উল্লেখ করা হয়েছে। টিআইবি দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাত ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যার মূল উদ্দেশ্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারের সহায়ক ভূমিকা পালন করা। ফলে টিআইবি’র বিরুদ্ধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা বা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা, দেশের কোনো সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ইত্যাদি অভিযোগ আনার কোনো সুযোগ নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি আরও জানায়, বরাবরের মতো টিআইবি’র এই গবেষণায় জরিপ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে বহুল অনুসৃত মানদ- ও চর্চা অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণায় বৈজ্ঞানিক মান ও পদ্ধতিগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত, এই গবেষণায় ৮ বিভাগের ৪৩টি জেলায় নিয়োগকৃত মাঠ তথ্য সংগ্রহকারীগণ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় গবেষণায় উল্লিখিত সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসাসেবা, নমুনা পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণ করেছে এমন সেবাগ্রহীতাদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের মধ্য থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১৮০০ জন সেবাগ্রহীতার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় চিকিৎসা গ্রহণকালীন সময়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ না করে তাদের টেলিফোন নাম্বার সংগ্রহ করে পরবর্তী সময়ে তাদের সাক্ষাৎকার  গ্রহণ করা হয়।

পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে টেলিফোন সাক্ষাৎকার একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। ফলে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে সঠিক তথ্য উঠে আসে না, এই অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, টেলিফোন সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ৪৩টি জেলার ১০৫টি টিকা কেন্দ্র থেকে টিকা গ্রহণ করার পর টিকা কেন্দ্র হতে বের হওয়ার সময় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪০১৫ জন টিকাগ্রহীতার টিকার নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণের অভিজ্ঞতা বিষয়ে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার (এক্সিট পোল) গ্রহণ করা হয়েছে। তৃতীয়ত, জরিপের পাশাপাশি সারা দেশের ৪৮টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬৭১ জন মানুষের কাছ থেকে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সেবাগ্রহীতার মতামত নেয়া হয়েছে।

গবেষণায় পরিচালিত প্রতিটি জরিপ কার্যক্রমেই পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে এমন নমুনা সংখ্যা নির্বাচন করা হয়েছে যা কোভিড-১৯ সেবাগ্রহীতাদের প্রতিনিধিত্বশীল। এ ছাড়া পরোক্ষ তথ্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য, এবং গণমাধ্যমে (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক) প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে তথ্য সংগ্রহ, পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাই করে ব্যবহার করা হয়েছে এবং গবেষণায় ব্যবহৃত প্রতিটি তথ্যের সূত্র দেয়া হয়েছে। গবেষণাকালীন সময়ে সংগৃহীত প্রতিটি তথ্য একাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে এই গবেষণার ফলাফল সঠিক নয় এমন অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং, এই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিটি তথ্য ও বিশ্লেষণ বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ।  

টিআইবি উল্লেখ করে, টিআইবি’র প্রতিবেদনকে ‘সঠিক নয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত না করে বরং টিআইবি কর্তৃক চিহ্নিত ঘাটতিসমূহকে দূর করা এবং সুপারিশকৃত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই অতিমারি নিয়ন্ত্রণে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। টিআইবি’র কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা ও কার্যক্রমকে কীভাবে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা যায় সে বিষয়ে গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণের মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা করা। তাই টিআইবি আশা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গবেষণায় উল্লিখিত ফলাফলকে নিরপেক্ষ ও  নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তাদের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করবেন যেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগগুলো সফল হয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom