এবারও বিক্রি হলো না ‘রাজা বাবু’, হতাশ মালিক

এবারও বিক্রি হলো না ‘রাজা বাবু’, হতাশ মালিক

প্রথম নিউজ, মাদারীপুর : এবারের কোরবানি ঈদেও বিশাল আকৃতির গরু ‘রাজা বাবুকে’ বিক্রি করতে পারলেন না মাদারীপুর সদর উপজেলার মফেল ভূঁইয়া। তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে গরুটি লালন-পালন করেছেন। সন্তানের মতো আদর-যত্নে পালন করা রাজা বাবুর দাম ২৫ থেকে ২৮ লাখ টাকা হাঁকেন মফেল ভূঁইয়া। তবে দাম নিয়ে কড়াকড়ির চেয়ে যারা আদর ও যত্ন সহকারে গরুটি কিনবেন তাদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়ার পরেও ক্রেতার অভাবে তিনি বিক্রি করতে পারেননি। 

গোপালগঞ্জ থেকে আসা আমিনুল হক নামে এক ক্রেতা মফেল ভূঁইয়ার বাড়িতে এসে দাম বলেছিলেন ১০ লাখ টাকা। এর চেয়ে বেশি দামের আসায় মফেল গরুটিকে ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে নেন। সেখানে তার রাজাবাবুর দাম বলেছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। গরুটি লালন-পালন করতে যা খরচ হয়েছে তার চাইতে কম দাম বলায় ফেরত নিয়ে আসেন তিনি। 

মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের খাটোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মফেল ভূঁইয়া। তিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো আদর-যত্ন করে পালন করছেন রাজা বাবুকে। সম্পূর্ণ দেশি ঘাস আর বিভিন্ন ধরনের ভুসি খাইয়ে গরুটি বড় করেছেন তিনি। গতবার কোরবানির ঈদে গরুটির দাম উঠেছিল ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বিক্রি করেননি। এবার আরও যত্ন করে বড় করেছেন রাজা বাবুকে। গরুটির ওজন এখন প্রায় ৪০ মণ বলে দাবি মফেল ভূঁইয়ার। তিনি এবারও তার গরুটির ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন। 

এ ব্যাপারে মফেল ভূঁইয়া বলেন, সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ঘাস, ভুসি, খৈল খাইয়ে লালন-পালন করা হয়েছে রাজা বাবুকে। সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে প্রতিদিন গোসল করানো হয়। পরম যত্নে গরুটিকে পালন করতে পরিবারের সদস্যরাও কষ্ট করছে। বিশাল আকৃতির গরুটি প্রায় সাড়ে ৯ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন। এই বিশাল আকৃতির গরুটি আমি এখন বৃদ্ধ বয়সে কীভাবে লালন-পালন করব। এই গরুটিকে ঘরের ভেতরে নেওয়া-আনা অনেক কষ্টসাধ্য। গতবার যেই দাম বলেছিল বাড়িতে বসে এবারও সেই দাম বলেছে। চার বছর লালন-পালন করেছি। ভেবেছিলাম হাটে নিলে এর চেয়ে বেশি টাকায় বিক্রি করতে পারব। কিন্তু আসলে হাটে নিয়ে এসে দেখি বাড়ির চেয়ে দাম কম বলছে। আমি এখন এই বিশাল আকৃতির গরুটি নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছি। এটাকে লালন-পালন করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। এখনো ব্যয় হবে, আমি ন্যায্যমূল্য না পাই তাহলে লালন-পালন করবে কীভাবে? 

মফেল ভূঁইয়ার ছেলে ফাহিম বলেন, আমাদের গরুটি লালন-পালন করতে যেই টাকা খরচ হয়েছে তার চেয়েও ক্রেতারা দাম কম বলেছে। এই বিশাল আকৃতির গরুটিকে আমাদের লালন-পালন করতে বড় কষ্ট হয়। এই গরুটিকে নিয়ে আমরা এখন চিন্তায় আছি। 

মফেলের স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, রাজা বাবুকে লালন-পালন করতে আমাদের অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। গতবার খামার করায় অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। ভাবছিলাম রাজাবাবুকে বিক্রি করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু রাজা বাবুকে তো আমরা বিক্রি করতে পারলাম না। এখন আমাদের ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব। 

মফেলের বড় মেয়ে ফাহিমা বলেন, আমার বাবা বৃদ্ধ। এই বয়সে গরু ঘর থেকে বের করা, ঘাস খাওয়ানো, এসব কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। গরুটিকে বিক্রি হয়নি। এখন গরু নিয়ে কী করবে আমরা বুঝতে পারছি না। 

কুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমিত হোসেন কবির বলেন, আমি দেখেছি মফেজ ভাইয়ের কয়েকটি গরুর মধ্যে একটি গরু অনেক বড় হয়েছে। দেখতে অনেক সুন্দর। ওজন প্রায় ৩০-৪০ মণের মতো হবে। শুনেছি সেই গরুটি সেই বিক্রি হয়নি। এবারও গরুটির দাম কম বলেছে। সে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। 

মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন,কুনিয়া ইউনিয়নের খাটোপাড়া গ্রামের বিশাল আকৃতির গরু রাজাবাবুকে বিক্রি করতে না পেরে না হতাশায় ভুগছেন গরুটির মালিক মফেল ভূঁইয়া। শহর থেকে বেশ দূরে তার বাড়ি। তারপরও নিয়মিত তার খামারে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।