এতিমখানার সরকারি অনুদানের চেক বিতরণে মোটা অংকের ঘুষ দাবির অভিযোগ
অভিযুক্ত অফিস সহকারীর নাম মেহেদী হাসান, সে উপজেলা সমাজসেবা কার্যলয়ের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছেন।
প্রথম নিউজ, বরগুনা: বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত এতিমখানাগুলোতে অনুদানের চেক বিতরণে মোটা অংকের ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত অফিস সহকারীর নাম মেহেদী হাসান, সে উপজেলা সমাজসেবা কার্যলয়ের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালতলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা না থাকায় আমতলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাওসার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই উপজেলায় ক্যাপিটেশন গ্রান্ট এতিমখানাগুলো থেকে চেক দেওয়ার নামে প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে ঘুষ নিয়ে থাকেন আমতলী উপজেলা সমাজসেবা কার্যলয়ের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান।
এদিকে তার আপন বোন হাফিজা আক্তার একই পদে তালতলী উপজেলা সমাজসেবা কার্যলয়ে কর্মরত। ফলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের ঘুষ নিচ্ছেন তারা। এমনটাই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। সমাজসেবা দপ্তরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত তালতলী উপজেলার একাধিক এতিমখানার পরিচালকরা অভিযোগ করে বলেন, তালতলী উপজেলায় ১৯ এতিমখানায় ক্যাপিটেশন গ্রান্ড পায়। এর মধ্যে থেকে ১৭টি এতিমখানার ২০২২ অর্থবছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিল প্রদান করেছে। এদের পরিচালকদের সবার কাছ থেকেই সরকারি অনুদানের চেক বিতরণে ১৫ পারসেন্ট করে টাকা নিয়েছে মেহেদী ও তার বোন হাফিজা আক্তার।
তালতলী উপজেলার একটি এতিমখানার শিক্ষক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার এতিমখানার এতিমদের জন্য ২০২২ সালের ছয় মাসে ৪ লাখ টাকার সরকারি বরাদ্দ অনুমোদন হয়। এই টাকার চেক উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে এতিমখানায় হস্তান্তরের কথা। কিন্তু আমতলী উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী মেহেদী হাসান চেক বিতরণের জন্য অর্ধেক (২লাখ) টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অপারগতা জানালে আমাকে হয়রানি করাসহ বেশ কয়েকদিন ঘুরানো হয়। সবাইকে চেক দেওয়া হলেও আমার চেক আটকিয়ে রেখেছে। তাছাড়া সে অন্য উপজেলায় চাকরি করে সে আমাদের উপজেলা এসে প্রভাব বিস্তার করে।
আমতলী উপজেলার ছোট ভাইজোড়া শিশু সদনের শিক্ষক কালাম মাওলানা বলেন, মেহেদী অন্য উপজেলায় চাকরি করে। কিন্তু তার বোন এই উপজেলার অফিস সহায়ক হওয়ায় সে এখানে এসে প্রভাব বিস্তার করে। তাছাড়া দুই উপজেলার একই অফিসার দায়িত্বে থাকায় সে প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছেন। এদিকে তালতলী উপজেলার একাধিক এতিমখানার পরিচালকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিল পাওয়ার আগেই তাকে ১৫ পার্সেন্ট টাকা তাকে দিতে হয়। এরপরে সে আমাদের চেক দেয়। যারা অগ্রিম টাকা দয়নি তারা এখনো বিল পায়নি।
আমতলী উপজেলার পশ্চিম চিলার পরিচালক একেএম রুহুল আমিন বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠানের সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ জনার ক্যাপিটেশন গ্রান্ড পায়। সেই টাকার চেক আনতে গিয়ে তাকে ৬৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে মেহেদী হাসান কে। আমরা এসব কথা বলতে গেলে তাহলে আমাদের এতিমখানা বন্ধ হয়ে যাবে তাই আমরা ভয়ে, কারো কাছে এসব বিষয় বলি না। তবে এসব অভিযোগ অস্বিকার করে আমতলী উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোনো ঘুষ গ্রহণ করিনি। আপনাদের কোনো কিছু জানার থাকলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
আরেক অভিযুক্ত তালতলী সমাজ সেবা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ও মেহেদী হাসানের বোন হাফিজা আক্তার বলেন, মেহেদী হাসান আমার ভাই সে ঠিক আছে। সে অন্য উপজেলায় চাকরি করে। এখানে তো তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। যারা এই ৫০ শতাংশ ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে বলেছেন তারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা কারো কাছে কোনো ঘুষ চাইনি।
অফিস সহায়কের এমন ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে বরগুনা জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেন, আমতলী উপজেলায় কর্মরত অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান তালতলী উপজেলার এতিমখানার বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা আছে এটা আমি জানতে পেরেছি। তবে এমন ঘুষ চাওয়ার বিষয় দুঃখজনক! তদন্ত করে যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।