এডিস মশার লার্ভা: ৫ প্রতিষ্ঠানকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা
আজ সোমবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ভবনেও এডিসের লার্ভা থাকায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠানের ভবনে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা থাকায় জরিমানা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ সোমবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ভবনেও এডিসের লার্ভা থাকায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা), যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)। জরিমানা করা ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনটি হলো কারওয়ান বাজার মোড়ের জাহাঙ্গীর টাওয়ার।
আজ দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করা হয়। জরিমানা করেন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মোতাকাব্বীর আহমেদ। ঐ সময় দেখা যায়, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মেয়র আতিকুল ইসলাম জাহাঙ্গীর টাওয়ারের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ে যান। সেখানে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। অভিযানের শুরুতে সেখানে মালিকপক্ষের লোকজন থাকলেও জরিমানা করার সময় পালিয়ে যান। ফলে মালিকপক্ষের কার্যালয়ে তালা দিয়ে আসা হয়। পরে বিকেলে মালিকপক্ষের লোকজন জরিমানা পরিশোধ করেন।
এরপরে মেয়র যান পেট্রোবাংলা ভবনের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ে। এই পার্কিংয়ে কর্মকর্তাদের গাড়ি রাখা হয়। সেখানের দেয়াল ঘেঁষে একটি ছোট পানির নালায় প্রচুর পরিমাণে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ পরিস্থিতি দেখে পেট্রোবাংলাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে দেখছি যে পেট্রোবাংলার গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় নালার মধ্যে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এখানে রীতিমতো এডিস মশার লার্ভার চাষ হচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দেওয়ার বদলে তারা যদি ৫০০ টাকার ব্যবস্থা নিত, তাহলে এডিস মশার প্রজনন হতে পারত না।’
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের ভবনে যাতে পানি না জমে, সে ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মশার লার্ভা পাওয়ার দায়ভার ওই ঠিকাদার এবং পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের ওপর বর্তায়। এরপরে মেয়র যান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নির্মাণাধীন একটি ভবনে। সেখানেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। একইভাবে টিসিবি ও বিটিএমসি ভবনের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়েও জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা ছিল। অভিযানে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানকেও পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। এরপরও দু–একটা জায়গায় একটু গ্যাপ হতে পারে, যেটা এখন পাওয়া গেল। আমরা চেষ্টা করব এটা জিরো পর্যায়ে নামিয়ে আনার।’ মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা যার যার আশপাশের আঙিনা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, যদি পানি জমা হতে না দিই, তাহলে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না।’
এরপরে মেয়র কারওয়ান বাজারে অবস্থিত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন ও ঢাকা ওয়াসা ভবনে যান। কিন্তু এসব ভবনের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। যদিও ঢাকা ওয়াসা ভবনের পার্কিংয়ের জায়গায় দেয়াল ঘেঁষে থাকা নালায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পরে ওই পানিতে লার্ভা নিধনের ওষুধ ছিটিয়ে দেন ঢাকা উত্তর সিটির মশকনিধন কর্মীরা। অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠান, যেসব প্রতিষ্ঠানে হয়তো আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বসে আছে, ওনারা হয়তো ঠিকই দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু ওনাদের নিচু স্তরে যাঁরা আছেন, তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই মশার লার্ভা হচ্ছে। এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।’
মোতাকাব্বীর আহমেদ আরও বলেন, দণ্ডবিধির ৩৬৯ ধারায় জরিমানা করা হয়েছে। এটি একটি বার্তা যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো অফিস-ব্যক্তি—কেউই জরিমানার আওতা থেকে বাদ যাবে না।