ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরের ৩ যুবক নিহত

গতকাল ৩ জনের মৃত্যুর খবর এলে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরের ৩ যুবক নিহত

প্রথম নিউজ, মাদারীপুর: অবৈধভাবে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরের ৩ যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। গতকাল ৩ জনের মৃত্যুর খবর এলে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশাহারা পরিবার। এ ঘটনায় দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পাঁচখোলা গ্রামের আলি আক্কাবরের ছেলে মো. সম্রাট (২৪) ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পাড়ি দিয়েছিলেন ইতালির পথে। মাস পাঁচেক আগে রাসেদ খান নামে এক দালালের সঙ্গে চুক্তি হয় ইতালি পৌঁছে দেয়ার। এ সময় দালাল সম্রাটের পরিবারের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেয়। এরপর লিবিয়ার একটি বন্দি শিবিরে আটকে রাখে। চালানো হয় নির্যাতন।

ঠিকমতো খাবারও দেয়া হতো না। এরপর হঠাৎ করেই খবর আসে সম্রাট মারা গেছে। সম্রাটের ভাই আজগর বলেন, কতোগুলো টাকা খরচ করে ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছি। এখন আমার ভাই নাই। সে মারা গেছে। দালাল বলছে লাশ এনে দিবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালাল রাসেদ খান ও তার ভাই টুলু মাদারীপুরের সহজ সরল মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ইতালি নেয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করে। তার বিরুদ্ধে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে একাধিক মামলা রয়েছে।

গত ১৪ই জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০) ও সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২৫) সহ বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে গত বুধবার লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় রওয়ানা দেয় তারা। ৩২ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নৌকায় ৫২ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ মারা যায় ১২ জন। পরে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। এ ছাড়া এখনো নিখোঁজ পার্শ্ববর্তী গোহালা ইউনিয়নের পান্নু শেখের ছেলে আপন শেখ।

নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজীব শেখ ও নিহত সজল বৈরাগীর পিতা সুনীল বৈরাগী জানায়, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩-১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ইতালি পাঠালে ঘটে এই দুর্ঘটনা।  রাজৈর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার আসাদ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। মাদারীপুর সদর থানার ওসি এএইচএম সালাহউদ্দিন বলেন, মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। মামলা হলে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করবে। কিন্তু পরে আবার বাদীদের সঙ্গে মীমাংসা করে ছাড়া পেয়ে যায়।