ইতিবাচক ভূমিকার জন্য ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানালেন মির্জা আব্বাস
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আপনারা আগামীকাল নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র মহাসমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে যথাযথ সহযোগিতা করবেন। আশা করি সমাবেশে আসার পথে জনগণ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে কোন প্রকার বাধা প্রদান করা হবে না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, দেশ আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের মানুষের জান-মাল, বিষয়-সম্পত্তি আজ চরমভাবে বিপন্ন। নারী, বৃদ্ধ, শিশুসহ কোন বয়সের মানুষই নিরাপদ নয়। দেশের মানুষ আজ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। গণতন্ত্রের সর্বশেষ চিহ্নটি মুছে ফেলা হয়েছে কর্তৃত্ববাদী দু:শাসনের যাঁতাকলে। মধ্যম ও নি¤œ আয়ের মানুষরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা হয়ে পরেছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ¦ালানী তেলসহ নিত্যব্যবহার্য জিনিস মানুষের ক্রয় ক্ষমতা থেকে দূরে চলে গেছে। এক দমবন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের সামাজিক জীবন অস্থির হয়ে পড়েছে। এইরকম শ^াসরুদ্ধকর পরিস্থিতি আজ ১৫ বছর ধরে দেশে বিরাজমান। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এক কঠিন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁকে চক্রান্তমূলক মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের উপর চালানো হয়েছে নির্যাতন এবং চক্রান্তমূলক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাজা। স্বেচ্ছাতন্ত্র, উগ্র অহংকার ও একককর্তৃত্ব ইত্যাদী গণতন্ত্রের নীতি বিরোধী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পুণ:প্রতিষ্ঠার একদফা আন্দোলনে আজ সারাজাতি ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ জিয়ার নেতৃত্বেই এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ^াস করে বলেই আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে। সুতরাং গণতন্ত্রে বিশ^াসী দল হিসেবে বিএনপি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে এসেছে। সুতরাং বারবার বিএনপি’র কর্মসূচির উপর নৃশংস হামলা করার পরও বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে।
সুতরাং কয়েকমাস ধরে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ধারাবাহিক কর্মসূচিতে সরকারের পক্ষ থেকে হামলা হলেও বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে কখনোই সহিংস সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ায়নি বরং সরকারের পক্ষ থেকেই গুলি ও সশস্ত্র অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীকে খুন, জখম ও পঙ্গু করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি’র সমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশ ইত্যাদী নানা কর্মসূচিতে সরকারি দল বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হামলা হলেও এর প্রতিবাদ জানাতে বিএনপি তার নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপুর্ণ কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি এবং কোন উস্কানিতে পা দেয়নি। বন্ধুরা, আজ ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ কর্ম দিবসের অজুহাত তোলা হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো যেকোন দিবসেই, সেটি কর্মদিবসই হোক অথবা বন্ধের দিনই হোক, তা পালন করতে বাধা দেওয়া হয় না। তারপরেও সকলদিক বিবেচনা করে দলের পক্ষ থেকে আজকে ২৭ জুলাইয়ের কর্মসূচি পরিবর্তন করে আগামীকাল শুক্রবার বন্ধের দিন জুম্মার নামাজের পরে বেলা ২ টায় নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেয়া হয়। আমরা মহাসমাবেশকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। দলের নেতাকর্মীরা অত্যান্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহকারে শান্তিপুর্ন এই মহাসমাবেশে দলে দলে যোগ দেবেন। বিলম্বে হলেও আগামীকাল মহাসমাবেশে পুলিশ কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে বারবার শান্তিপুর্ন কর্মসূচির কথা বলে হলেও আমাদের প্রায় ৫০০ শতাধিক নেতাকর্মীকে গত দুই দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি মনে করি সরকারের এই সিদ্ধান্ত অগনতান্ত্রিক এবং নিপীড়নমূলক। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আটককৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে আবারও আহ্বান জানাই, আপনারা আগামীকাল নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র মহাসমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে যথাযথ সহযোগিতা করবেন। আমি আশা করি সমাবেশে আসার পথে জনগণ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে কোন প্রকার বাধা প্রদান করা হবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, ঢাকার বিভিন্ন মোড় এ চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এমনি আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি ও হোটেলে থেকে আটক করছে এই সরকারের পুলিশ। একটা কথা পরিষ্কার, বিএনপি কখনো অশান্তির রাজনীতি করে না। এমনি ক্ষমতাসীনরা আমাদের কর্মসূচি দেখে পাল্টা কর্মসূচি দেয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির দিক থেকে কোন সংঘাতের আশঙ্কা নেই এই মহাসমাবেশ নিয়ে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কয়েক ঘন্টার ভিতরে কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম করার ক্ষমতা রাখে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক সালাম, উত্তরের আহবায়ক আমানুল্লাহ আমান, উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।