আমি কোনও অপরাধ করিনি: দুদকে ড. ইউনূস

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল সকাল ১০টা ৩৭ মিনিট থেকে ১০টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন একটি টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। 

আমি কোনও অপরাধ করিনি: দুদকে ড. ইউনূস

প্রথম নিউজ, অনলাইন: তলবের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুদক কর্মকর্তারা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি অপরাধ করিনি। আমি শঙ্কিত নই। আর শঙ্কিত কেন হবো? শঙ্কিত হওয়ার তো কোনো কারণ নাই। আমাকে ডেকেছে, সেজন্য আমি এসেছি। আমার আর কিছু বলার নাই। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল সকাল ১০টা ৩৭ মিনিট থেকে ১০টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন একটি টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। 

দুদক থেকে বেরিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ড. ইউনূস। এ কারণেই যথা সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবে হাজির হয়েছেন। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকারখানা পরিদপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দুদক মামলা করে। ওই মামলার তলবে সকাল সাড়ে ৯টা ৩৮ মিনিটের দিকে আইনজীবীসহ দুদক কার্যালয়ে হাজির হন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

এক ঘণ্টার কিছু সময় বেশি দুদকের তদন্ত টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ১০টা ৫৮ মিনিটে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন ড. ইউনূস। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস এবং তার আইনজীবীকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। প্রথমে অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী মামলার বিষয়বস্তু এবং দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য তুলে ধরেন। আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা আইনজীবীকে এড়িয়ে অধ্যাপক ইউনূসের কাছ থেকে বক্তব্য জানতে চান। 

অধ্যাপক ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয় তিনি দুদকের ভয়ে শঙ্কিত কি না? জবাবে তিনি বলেন, আমি তো অপরাধ করি নাই, শঙ্কিত কেন হবো? শঙ্কিত হবার কোনো কারণ নাই। সাংবাদিকদের ক্রমাগত প্রশ্নে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাকে ডেকেছে, সেজন্য এসেছি। আমার আর কিছু বলার নাই। বিষয়টিকে তিনি লিগ্যাল মেটার বা আইনগত বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন- বিষয়টি তার আইনজীবী বুঝিয়ে দেবেন। 

ইউনূসের আইনজীবী ও দুদক সূত্র জানায়, সকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান দুদক কার্যালয়ে আসেন। 

ড. ইউনূসের আইনজীবী যা বলেন: 
ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন দুদক কার্যালয়ের বাইরে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে করা। গ্রামীণ টেলিকম একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার লক্ষ্য শিল্প কারখানা গড়ে তুলে বেকারত্ব দূর করা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। তাতে বলা আছে কেউ কোনো মুনাফা নেবে না। এই মুনাফা উন্নয়নের জন্য একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হবে। কোম্পানি আইনের ২৮ ধারার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আইনানুযায়ী যারা সমাজের কল্যাণের জন্য কাজ করবে তাদের কোনো মুনাফা দেয়া নিষিদ্ধ। তাই এই গ্রামীণ টেলিকম, কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি সিদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এটা লেবার আইনে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি নয়, কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোম্পানি আইনে।

তিনি আরও বলেন, আমি ড. ইউনূসের আইনজীবী হিসেবে ভেতরে  গিয়েছিলাম এবং আমি আইনের সমস্ত ব্যাখ্যা ওইখানে দিয়েছি। উনারা  বলেছেন, ওই সমঝোতা চুক্তিটি জাল। আমি বলেছি, আপনারা জাল বলতে পারেন না, কারণ দুই পক্ষের সমঝোতা যখন হয়, তখন আর সেটা জাল থাকে না। এটা হাইকোর্টের অনুমোদন পাওয়া, সুতরাং এটা জাল না। ওই চুক্তিতে ছিল, শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সাতদিনের মধ্যে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। সাতদিনের মধ্যে আমরা অ্যাকাউন্ট করেছি। হ্যাঁ, আমরা টেলিফোনে অনুমতি নিয়েছি, কারণ সবাই একসঙ্গে থাকে না। আমরা ৯ তারিখের জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সবার অনুমতি নিয়েছি। দুদক বলেছে, আপনারা অনুমতিটা পরে নিয়েছেন। আমি বলেছি, দেরি হওয়ার ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে এটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। আইনজীবী বলেন, ড. ইউনূসের নামে দুদক এই মামলা করেছে। মামলায় বলা হয়েছে শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা দেয়া হয়নি। এর ভেতরে শ্রমিকরা তাদের অগ্রিম হিসেবে ২৬ কোটি টাকা দাবি করেছে। শ্রমিকরা বলেছে- ২০১৭ সাল থেকে আমরা মামলা করেছি। পরে হাইকোর্টের অনুমোদনে, নির্দেশে আমরা এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে তাদের (শ্রমিকদের) ৪৩৭ কোটি টাকা তাদের দিতে সম্মত হয়েছি। কারণ ওই টাকার ব্যাপারে শ্রমিকরা আবেদন করে। ট্রেড ইউনিয়ন বলছে, আমাদের টাকাটা এডভান্স দিতে হবে। না হলে আমাদের আইনজীবী কাজ করবে না। তখন শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন তাদের আন্ডারটেকিং নিয়ে ২৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুদক বলছে, আপনারা জালিয়াতি করে তাদের সঙ্গে ইয়ে করে নিয়ে নিয়েছেন। এটা তো দুই পক্ষের সমঝোতা। টাকা দেয়া হয়েছে, শ্রমিকের সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যেটা হাইকোর্ট অনুমোদন করেছে। সুতরাং এইটা তো জালিয়াতি হতে পারে না।