সরকারের জনসমাগম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বিরোধী দলের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ ও দমন করার জন্য: বিএনপি
বিএনপি ও অঙ্গ দল সমূহের সকল কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলার নেতৃবৃন্দকে পুনঃনির্দ্ধারিত তারিখে সভা সমাবেশ সফল করার জন্য প্রস্তুতি অব্যহত রাখার আহŸান জনাচ্ছি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকার ১১ দফা নির্দেশনা অবশ্যই কোভিডের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে নেয়া হয়নি। বিরোধী দল সমূহের চলমান প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ ও দমন করার জন্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
আজ শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কাযর্ালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ বিস্তারের প্রথম দিকে সরকারী অবহেলা এবং সরকারের মন্ত্রী ও সরকারী দলের নেতাদের দায়িত্বহীন আস্ফালন দেশের জনগণকে বিপদাপন্ন এবং কোভিডের অসহায় শিকারে পরিণত করেছে। পরবর্তীতে কোভিড নিয়ন্ত্রণের ও চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্ব প্রাপ্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দূর্নীতি, অযোগ্যতা ও সমন্বয়হীনতা সংকটকে জটিলতর করেছে। যার ফলে হাজারো মানুষ Ñ এমনকি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তিগণ অকালে মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। পর্যাপ্ত সংখ্যাক জনগণকে টিকার আওতায় আনার ক্ষেত্রে আমরা পাশ^বর্তী দেশগুলো Ñ এমনকি দরিদ্র ও যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের চেয়েও পিছিয়ে ছিলাম। প্রায় ২ বছরেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোভিডের টিকা পায়নি। সরকার তথাকথিত উন্নয়ন ও সাফল্যের যে বড়াই করে তা জনগণের কোন উপকারে আসেনি Ñ আসছেনা। এমনকি এক সময়ে কোভিডের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। বিশ^ব্যাপী সবাই এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমন রোধে দলমত নির্বিশেষে সকলের অংশ গ্রহনে তৎপর হলেও বরাবরের মত এদেশের সরকার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিম্বা বাস্তবায়নে জনগণকে সম্পৃক্ত না করার আত্মঘাতি প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞ মহল যখন বলছেন Ñ উম্মুক্ত স্থানের চেয়ে বদ্ধ স্থানে কোভিড বেশী ছড়ায় Ñ তখন বাংলাদেশ সরকার ১১ দফা নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উম্মুক্ত স্থানে জনসমাগম নিষিদ্ধ করে বদ্ধ স্থানে তা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এই অযৌক্তিক সরকারী সিদ্ধান্ত অবশ্যই কোভিডের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে নেয়া হয়নি। বিরোধী দল সমূহের চলমান প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ ও দমন করার জন্য করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাবে; হাট-বাজার, যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে; দোকান-পাট, শপিং মল খোলা রাখা যাবে; সারা দেশে মেলার আয়োজন করা যাবে এবং মুজিব বর্ষ পালনের কর্মসূচী দীর্ঘায়িত করা যাবে সেখানে উম্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারন থাকতে পারেনা। কাজেই এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অগণতান্ত্রিক এবং দমন মূলক বলেই আমরা মনে করি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণকে ভালবাসি এবং জনগণের জন্য রাজনীতি করি বলেই আমরা বিভিন্ন সময়ে করোনার সংক্রমণ এবং তার অনিবার্য ক্ষতি সম্পর্কে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছি। জনগণকে সচেতন এবং ঔষধ, অক্সিজেন সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। এমনকি সংক্রমনের বৃদ্ধি রোধের লক্ষ্যে দলীয় কর্মসূচী বন্ধ রেখে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখনও আমাদের কাছে জনস্বার্থই সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সরকার কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ও ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট প্রতিরোধে যতটা না আগ্রহী, তার চেয়েও বেশী আগ্রহী বিরোধী দল দমনের সুযোগ খোঁজায়। ইতোমধ্যে তার অসংখ্য প্রমান আপনারা দেখেছেন। ১১ দফা নির্দেশাবলী জারী হওয়ার আগেও আমাদেরকে দেশের বহু স্থানে সমাবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে, ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এসব দমনপীড়নে চলমান আন্দোলকে স্তব্ধ করা যায় নি বরং তা আরো বেগবান হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ ও দারুন ভাবে অসুস্থ্য দেশনেত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসাসহ অনির্বাচিত, দুর্নীতিবাজ ও বিশ^দরবারে মাতৃভূমির মর্যাদা বিনষ্টকারী সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের অর্থনৈতিক, সমাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য যথার্থই নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে এবং চলবে। ইতোমধ্যে জনস্বার্থ এবং প্রাসঙ্গিক সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের চলমান সভা সমাবেশের তারিখ পুনঃনির্দ্ধারন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা বিএনপি ও অঙ্গ দল সমূহের সকল কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলার নেতৃবৃন্দকে পুনঃনির্দ্ধারিত তারিখে সভা সমাবেশ সফল করার জন্য প্রস্তুতি অব্যহত রাখার আহŸান জনাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: