সরকারের বিশেষ বন্ড কেনার নীতিমালা শিথিল

এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সরকারের বিশেষ বন্ড কেনার নীতিমালা শিথিল

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সার ও বিদ্যুতের বকেয়া ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের জন্য সরকারের বিশেষ বন্ড কেনার জন্য নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব বন্ড ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত সরকারি সিকিউিরিটিজের (বন্ড বা ট্রেজারি বিল) ধারণ বা লেনদেনের সীমার মধ্যে পড়বে না। বিশেষ বন্ড কেনার পরিমাণ বাদ দিয়েই ব্যাংকগুলোর এসব ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমা হিসাব করা হবে। ফলে ব্যাংকের সক্ষমতা অনুযায়ী বিশেষ বন্ড কিনতে কোনো বাধা থাকবে না।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ও সারের বিপরীতে সরকার নির্ধারিত হারে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। আর্থিক সংকটের কারণে এ খাতের ভর্তুকি সরকার পরিশোধ করতে পারছে না। এদিকে বিদ্যুৎ ও সার খাতের উদ্যোক্তারা ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকায় সরকার ঋণ নিয়েও ভর্তুকির দায় পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে বিশেষ বন্ড ইস্যু করছে। এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে ব্যাংকগুলোর কাছেই। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক আর্থিকভাবে সবল ওইসব ব্যাংকের কাছে বন্ড বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে অনেকেই মনে করছেন, বন্ড এক ধরনের ঋণ। এ ব্যবস্থায় সরকার ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ না নিয়ে বিশেষ বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিচ্ছে। এতেও ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে পড়বে। তবে একটি দিক ভালো যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া হচ্ছে না।

বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি বাবদ সরকারের বকেয়া ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সার খাতে ১২ হাজার কোটি টাকা ও বিদ্যুৎ খাতে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার বন্ড ছেড়ে আপাতত নেবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে প্রয়োজনে তা আরও বাড়াতে পারবে। সর্বোচ্চ ২৫ হাজার কোটি টাকা বন্ড ছেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এখন পর্র্যন্ত ৭টি ব্যাংকের কাছে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বন্ড ইস্যু করেছে। বাকি বন্ড পর্যায়ক্রমে ইস্যু করবে। এ বন্ডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ সরকার স্পেশাল পারপাস বন্ড।’ এর মেয়াদ ১০ বছর। সুদের হার ৮ শতাংশ।

সূত্র জানায়, সরকারি খাতের বিভিন্ন ধরনের বন্ড ও ট্রেজারি বিল কেনাবেচার জন্য প্রতিটি প্রাইমারি ডিলার রয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারি বিল বন্ড কিনে সরকারকে ঋণের জোগান দেয়। এসব ডিলার প্রয়োজন মনে করলে বন্ড বা বিল অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারে। ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত অর্থ এসব বিল বা বন্ডে বিনিয়োগ করে মুনাফা করে। এছাড়া কিছু অংশ ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ আমানত সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করে।

ব্যাংকের সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ড বা বিল কেনা বা লেনদেন করার একটি সীমা রয়েছে। এই সীমার বেশি কোনো ব্যাংক সরকারি সিকিউরিটিজ কিনতে পারে না বা মার্কেটে লেনদেন করতে পারে না। নতুন ইস্যু করা এই বন্ডের ক্ষেত্রে ওই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো ওই সীমা হিসাব করার ক্ষেত্রে এসব বন্ড ধারের অঙ্ক হিসাবের মধ্যে আনা যাবে না।
একই সঙ্গে এসব বন্ড প্রাইমারি ডিলার নয় এমন ব্যাংকের ক্ষেত্রেও পোর্টফোলির সর্বোচ্চ সীমা বা ধারণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিসাবের বাইরে থাকবে। ফলে ব্যাংকগুলো যত ইচ্ছে এসব বন্ড কিনতে পারবে।