শিশুখাদ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে অভিভাবকরা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এই মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে শিশুখাদ্যেও। গত এক বছরে বিভিন্ন শিশুখাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এক বছর আগেও যেখানে শিশুদের ১ কেজি ৮০০ গ্রামের ল্যাকটোজেন দুধ বিক্রি হতো ২ হাজার ৩০০ টাকায়। সেটির দাম বেড়ে এখন প্রায় ৩ হাজার টাকা হয়েছে। শিশুখাদ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে অভিভাবকরা। অব্যাহতভাবে দাম বাড়ায় শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিশুখাদ্যের দাম যদি এমনভাবে বাড়তে থাকে তাহলে পুষ্টিহীনতায় ভুগবে শিশুরা। নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে। যা দেশের জন্য বড় রকমের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০০ গ্রাম ল্যাকটোজেনের টিনের জারের মূল্য ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৭০ টাকা হয়েছে। ৪০০ গ্রামের প্রাইমা দুধের টিনের জার ছিল ৪৫০ টাকা।
বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকায়। একইসঙ্গে বেড়েছে সেরেলাকের দামও। এক বছর আগেও মানভেদে ৪০০ গ্রামের সেরেলাকের মূল্য ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ থেকে ৪২৫ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে বর্তমানে এক কেজি পরিমাণের হরলিকস্ ৬৪৫ টাকা, ৯০০ গ্রাম নেসলের নিডো ৮৯০ টাকা, মার্কস ক্রিম মিল্ক পাউডার ৭৯০ টাকা, ডানো পাওয়ার ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার ৭২০ টাকা, ফ্রেশ ফুল মিল্ক পাউডার ৭৫০ টাকা, ডেনিশ ৭৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ডিপ্লোমা ৪০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম সেরিলাক ৩৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে আমদানি করা বিভিন্ন ব্রান্ডের দুধের দামও। ৯০০ গ্রাম ওজনের পিডিয়াশিওর ব্রান্ডের দুধ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০৫০ থেকে ২১০০ টাকায়। যা কয়েক দিন আগেও ছিল ১৮০০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক বছরে দুধের দাম তিন-চারবার বেড়েছে। অনেক পরিবারই সন্তানদের জন্য দুধ কিনতে এসে দাম শুনে হতাশ হয়ে পড়েন। কোম্পানি থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়া হলে আমরা কম রাখতে পারি না।
এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, আমার কাছে শুধু ল্যাকটোজেন ১, ২ ও ৩ রয়েছে। ল্যাকটোজেন ১ এর দাম আগে ছিল ৪৫০ টাকা, এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৪৭০ টাকা। ল্যাকটোজেন ২ ও ৩ এর দাম আগে ছিল ৪৮০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। প্রতিটি দুধের দামই ঈদের পরেই ২০ টাকা করে বেড়েছে। এদিকে সব ব্রান্ডের দুধের দাম বেড়েছে। প্রতি লিটার প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম ৮০ টাকা করা হয়েছে। আধা লিটার প্রতি প্যাকেট দুধের দাম ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা, ২৫০ মিলিলিটারের প্যাকেটের দাম ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা, ২০০ মিলিলিটারের প্যাকেট ১৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২০ টাকা এবং ২০০ মিলির প্রতি প্যাকেট ফ্লেভার্ড দুধের দাম ২১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে।
প্রতি মাসে শিশুদের খাদ্যের পেছনে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ৪০০ গ্রামের কৌটা দুধের দাম এখন ৯৫০ টাকায় কিনতে হয়। সরকারের অন্তত শিশুদের খাদ্যের দাম কমিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। স্বপ্নের আওটলেটে বাজার করতে আসা মাহমুদা বলেন, নিত্যপণ্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে আবার শিশুখাদ্যের দামও অনেক বেড়েছে। দুধ, ডিম কিংবা মাংস কোনো কিছুই নাগালের মধ্যে নেই। বাচ্চাদের পর্যাপ্ত খাওয়াতে পারি না। বাচ্চাদের টিফিনে আগের মতো ভ্যারাইটিজ থাকে না। মাহমুদা বলেন, আগে ৪০০ গ্রামের এক কৌটা দুধ কিনেছেন ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়। সেই দুধের দাম বেড়ে হয়েছে ৬২০ থেকে ৭৫০ টাকা। পুষ্টিবিদ সামিনা জামান কাজরী বলেন, শিশু গঠনের প্রধান উপাদান আমিষ। বাচ্চাকে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত আমিষজাতীয় খাদ্য না খাওয়ালে তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।
এ ছাড়া নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে। আমিষের অভাব থাকলে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি হয় না। এ ছাড়া শিশুর চুল, চামড়া ও নখে অপুষ্ট ভাব দেখা দেয়। প্রোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। আমিষের অভাব থাকলে শরীরের বিভিন্ন হরমোন ও এনজাইমে কোনো না কোনো সময়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। এ জন্য শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষজাতীয় খাদ্য খাওয়াতে হবে। পাঁচ বছরের বেশি বয়সের শিশুর জন্য দিনে অন্তত দুইবার দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খাওয়ানো উচিত।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews