শেখ সেলিমের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নিপুণ
প্রথম নিউজ, বিনোদন ডেস্ক: চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারকে নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে ক্ষোভের শুরু অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কেউ সেভাবে মুখ ফুটে বলতে পারেননি। বিশেষ করে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছেন, এটা ওপেন সিক্রেট। ২০২২ সালে শিল্পীদের নির্বাচনে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাথমিক ভোট গণনায় জায়েদ খান জয়ী হন। কিন্তু এই ফলাফল মেনে নেননি সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী নিপুণ। পরবর্তীকালে আদালতের নির্দেশে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন তিনি। বসেই কারও সঙ্গে আলোচনা না করে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করেন। যার ফলে কমিটির মেয়াদের আগেই পদত্যাগ করেন সহ সভাপতি সাইমন সাদিক। সরে দাঁড়ান এ কমিটির আরও অনেকে। শিল্পী সমিতিতে নিপুণের ক্ষমতার পেছনে এক রাজনীতিবিদের সরাসরি প্রভাব ছিল।
তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম। জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বদলে যায় নিপুণের জীবন। রাজনৈতিক অঙ্গনে চলাফেরা বাড়ে তার। সেই সময়ই শেখ সেলিমের সঙ্গে তার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। রাজনৈতিক পরিচয় ও শেখ সেলিমের ক্ষমতা দেখিয়ে চলচ্চিত্রেও নিজের প্রভাব বিস্তার করেন নিপুণ। বেশ কয়েকটি ছবিও সে সময় শেখ সেলিমের মদতে পান এ নায়িকা।
নিপুণের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টিউলিপ মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট থেকে একটি সিনেমা নির্মাণের কথা ছিল, যাতে অভিনয় করার কথা ছিল শেখ সেলিমের। সেই গল্পটিও ছিল তার লেখা। যদিও পরে তা আর হয়নি। শুধু তাই নয়, ক্ষমতার পাশাপাশি বাড়তে থাকে নিপুণের সম্পদও। বিদেশেও ঘন ঘন সফর করতে থাকেন। ২০১২ সালে বনানীর অভিজাত এলাকায় নিপুণ গড়ে তোলেন নিজস্ব পার্লার। সেটা উদ্বোধন করেন শেখ সেলিম। সেই থেকেই আলোচনায় আসেন নিপুণ। শেখ সেলিমকে সবার সামনে স্যার ডাকতেন নিপুণ। এমনকি অন্য শিল্পীদেরও বলতেন আঙ্কেল অথবা স্যার বলে সম্বোধন করতে। শুধু তাই নয়, শেখ সেলিমের ক্ষমতাবলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে খারাপ ব্যবহার করতেন নিপুণ। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে টাকার মাধ্যমে ভোট কেনার অভিযোগও ওঠে। তবে সে সময় বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি কেউ। এমনকি শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশনারদের ওপরও নানা হুমকি আসতে থাকে নিপুণকে বিজয়ী করার জন্য। শেখ সেলিমও সরাসরি কয়েকবার এ বিষয়ে কল করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন নির্বাচনে সরাসরি দায়িত্ব পালন করা একজন। এদিকে ২০২৪-২৬ সালের নির্বাচন হয় গত ১৯শে এপ্রিল, সেই নির্বাচনে হেরে যান নিপুণ। সভাপতি পদে জয়ী হন মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ডিপজল। সেদিন রাতেই বিজয়ীদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিলেও ২৫ দিন পরই মত পরিবর্তন করে নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পুরো কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নিপুণ। কিন্তু বেপরোয়া নিপুণ এবার সুবিধা করতে পারেননি।
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিল্পী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে গত জুলাই মাসে বিবৃতি দেন নিপুণ। এরপর তিনি বর্তমান কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন, এটা তিনি সাংগঠনিক নিয়মে করতে পারেন না। তার বিবৃতিতে লেখা ছিল, কোটা আন্দোলনকে ইস্যু করে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন এবং রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন, তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি- এই স্লোগান বাঙালি জাতির সবচেয়ে গর্বের স্লোগান। জয় বাংলা। এই বিবৃতি নিয়ে শিল্পীরা নিপুণের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন। এদিকে গত নির্বাচনে নিপুণ সংসদ সদস্য হতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের। সুপারিশও ছিল শেখ সেলিমের। কিন্তু সেই সুপারিশ কাজে লাগেনি। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন নিপুণ। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আগের মতো সরব নন তিনি।