রাবি শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ : আহত ৩ শতাধিক

শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল।

রাবি শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ : আহত ৩ শতাধিক
রাবি শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ : আহত ৩ শতাধিক

প্রথম নিউজ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। এ সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে রাবি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। জানা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে ছুটে আসেন। এ সময় প্রো-ভিসি সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অন্তত তিন শ’ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে কাভার করা যাচ্ছে না। আমরা তাদের বাস দিয়ে রামেকে (রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ) পাঠাচ্ছি। আমরা দ্রুত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।'

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে তার সাথে বাসের চালক শরিফুল ও চালকের সহকারী রিপনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে রিপনের সাথে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সাথে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির হয়। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও দোকানদারেরা মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। স্থানীয় দোকানদাররা অবস্থান করছেন বিনোদপুর বাজারে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের ভেতরে ক্যাম্পাসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের বিনোদপুর হয়ে কোনো যানবাহন চলতে দেয়া হচ্ছে না। বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বিনোদপুর বাজারে যান। তখন তার মোটরসাইকেলসহ ৪টি বাইক ভাংচুর করা হয়। এতে ঘটনা আরো বড় হয়ে যায়। শুরু হয় এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ। বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর ফটকে এসে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে বিনোদপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, রাবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়ন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। ঘটনার একপর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আসেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। এ সময় মেয়র সব পক্ষকেই শান্ত থাকার নির্দেশ দেন। এরপরও সংঘর্ষ চলছে। পরে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে মেয়রের সাথে আলোচনায় বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ সময় ভিসি বলেন, আগামী ২ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আগামী ৫ দিন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে সার্বক্ষণিক বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। আশপাশের মেসগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: