রাজনীতির এক জটিল সমীকরণে দেশ, কান্ডারি বিএনপি

রাজনীতির এক জটিল সমীকরণে দেশ, কান্ডারি বিএনপি

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: যে ইস্যুতে সারা দেশ নড়েচড়ে উঠে, সে ইস্যু জাতীয় ইস্যু হয়ে যায়। এই মুহুর্তে নৃশংসভাবে ভাংগারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকান্ড জাতীয় ইস্যু হয়ে গেছে। আর সব দোষ বিএনপির- এরকম একটা এজেন্ডা মাঠে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কে বা কারা ছড়িয়ে দিয়েছে সেটা একদম পরিস্কার না হলেও  অনেকটা পরিস্কার। তবে টার্গেটেড প্রপাগাণ্ডায় যেটা একদম পরিস্কার সেটা হলো এসব কিছুর দায় বিএনপির! বিএনপি নেতা-কর্মীরা দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতির তৈরি করেছে-এমন টার্গেটেড প্রপাগাণ্ডা করা হচ্ছে চারিদিকে।

এদিকে বিএনপি বলছে যেকোনো অপরাধ বা অপকর্মে সরকারকে আইনি ব্যবস্থা নিতে, বিএনপি নিজেও তার নেতা-কর্মীদের কোথাও কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা পেলে সাথে সাথে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে আহবান জানাচ্ছে।তবু যেন একটি গৌষ্ঠীর মন ভরছে না। তারা এখন আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপিকে মেপে বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে অবাঞ্চিত দেখতে চায়। এই, ওই দোষ চাপিয়ে বিএনপিকে জাতির কাছে ভিলেন বানাতে চায়।

বলতে চায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আর বিএনপি একই। তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ক্ষমতা পেলে বিএনপিও আওয়ামী লীগের মতোই হয়ে যাবে। এর মানে হলো আমরা বিএনপিকে চাইনা। মানে আমরা নির্বাচন চাইনা। কারণ নির্বাচন দিলে বিএনপি আসবে। আর বিএনপি এলে আওয়ামী লীগের মতো করেই দেশ চালাবে।আসলে তাদের মনের কথা হলো বিএনপি আসলে আমরা পাত্তা পাবোনা।তাই নির্বাচন চাইনা।

এইটা একটা আওয়ামী স্টাইল। এমনি করে আওয়ামী লীগও বিএনপিকে নিয়ে দেশ-বিদেশে একটা নেতিবাচক প্রপাগান্ডা চালাতো। দেশের মানুষকে বলতো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে নামলে বিএনপি এক রাতের মধ্যে তাদের এক লাখ নেতা-কর্মীকে মেরে ফেলবে। আর বিদেশিদের জন্য যেই প্রপাগাণ্ডাটা করতো সেটা হলো বিএনপি আসলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।সুতরাং বিএনপির হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা নিরাপদ নয়।

এর মধ্যে একটা প্রপাগাণ্ডা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেছে। বিএনপি হাসিনা পালানের পর এক রাতের মধ্যে এক লাখ কেন একজন আওয়ামী সন্ত্রাসীকেও হত্যা করেনি।বিপ্লবী সাধারণ মানুষ ওদের লুটেরা কিছু কিছু নেতাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।এই যা। বিএনপি ওবায়দুল কাদেরের বারবার করা আশংকার ধারে কাছেও যায়নি।সুতরাং এটা ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রায় ১ বছরে প্রমাণিত যে এটা ছিলো বিএনপির বিরুদ্ধে  আওয়ামী লীগের নিছক একটা মিথ্যে রাজনৈতিক কৌশল।

এবার বলি অপর প্রপাগাণ্ডা নিয়ে। সেটা হলো বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের মতোই দেশ চালাবে।এটা আরেটা বড় প্রপাগাণ্ডা বা মিথ্যা।সেটার প্রমাণ এখনই দেয়া যাবে। বিএনপি ভালো করেই জানে আওয়ামী লীগকে এই দেশ, এই দেশের ছাত্র, তরুণ,  যুব সমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই ঘৃণা দীর্ঘস্থায়ী। 

সুতরাং বিএনপি আদর্শগতভাবেই আওয়ামী লীগের বিপরীতমুখী একটা দল। বিএনপি শুধুমাত্র এদেশে প্রপাগান্ডার শিকার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কী এদেশে একবারও শেয়ার বাজার লুট হয়েছে। হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে। ঘটেনি। ব্যাংক সেক্টরে এরকম হরিলুট হয়েছে।হয়নি।

কেউ কেউ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দেখি আজকাল রা্ব গঠন নিয়ে বিএনপিকে দায়ী করে কথা বলার চেষ্টা করে। বাস্তবতা বিবেচনায় নেয়না বা এড়িয়ে যায়। বিএনপি র‌্যাব গঠন কেন করেছিলো। করেছিলো এজন্য যে ৯৬ এর আওয়ামী লীগ দেশটাকে সন্ত্রাসী, খুনীদের আস্তানা বানিয়ে ফেলেছিল। সাজেদা চৌধুরীর বান্ধবীর ছেলে ১০৬ টুকরা করে খুন করা থেকে শুরু করে,  সেই জয়নাল হাজারি,  লক্ষীপুরের তাহের, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান সহ অন্যরা সারাদেশে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। সেজন্য বিএনপি নির্বাচনী ওয়াদায় আইন-শৃঙ্খলা উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।সেই আলোকেই রাব গঠন করে। অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা করে। দাগীদের ক্রসফায়ারে দিয়ে ৯৬ এর আওয়ামী আমলের নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে  দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তোলে।এটা কেউ বা কোনো মিডিয়া বলেনা।

তখন বিএনপি নিজের দলের অনেক নেতা-কর্মীদেরকেও ছাড় দেয়নি। বিএনপি করেও বিএনপি আমলে ক্রসফায়ার লিস্টে ছিলো আজকের নারায়ণগঞ্জের জাকির খান। বিএনপি আমলে তাকে দেশ থেকে পালাতে হয় জীবন বাঁচাতে। নারায়ণগঞ্জের আরেক যুবদল নেতাকে রীতিমতো তাড়া করে হত্যা করা হয় বিএনপি আমলেই। সাহসী নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায় বিএনপি নারায়ণগঞ্জে। তবু দেশের জনগণের স্বার্থে বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের পর্যন্ত জীবন কেড়ে নিয়েছে। সেজন্য বিএনপি দলীয়ভাবে খেসারতও দিয়েছে। অথচ এরকম উদ্যোগ নেয়ার পরও বিএনপিকে নিয়ে দুকলম প্রশংসা নেই।কলমবাজরা শুধু ব্যস্ত ছিলো আওয়ামী লীগের দালালিতে।

সরকারে থেকে বিএনপি অতীতে কী করেছে সেটা দিয়ে না আপনি সামনে কি করতে পারে তার একটা হাইপোথিটিক্যাল মূল্যায়ন বা প্রেডিকসন করবেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে নির্যাতিত দল ছিলো বিএনপি।তাহলে বিএনপি তারপরও শেখ হাসিনা পালোনোর পর আওয়ামী লীগের লাখো নেতা-কর্মীদের হত্যা করেনি।উল্টো ৫ আগস্টের পর অনেক বিএনপি নেতা-কর্মীরা সারা দেশেই যৌথ বাহিনীর হেফাজতে সহ গুপ্ত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে।অথচ এসব হাইলাইটস করেনা এদেশের এন্টি বিএনপি মিডিয়া। তারা শুধু বিএনপিকে কোনঠাসা করতে এবং দোষী বানাতে তৎপর।

এর কারণও পরিস্কার।  সেটা হলো এতো বড় একটা দল,  অথচ তাদের কোনো মিডিয়া নেই। সামান্য ল্যান্ড বিজনেস করা এক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ গ্রপের যেই মানের মিডিয়া আছে। কোটি কোটি মানুষের দল বিএনপির কোনো ব্যবসায়ীর তার ধারে কাছের একটা মুখপত্র নেই। এপার্টমেন্ট ব্যবসায়ী রুপায়ণ গ্রপের যেই মানের পত্রিকা আছে। গোটা বিএনপির কোনো ব্যবসায়ীর তার ধারে কাছের কোনো পত্রিকা নেই। আর আওয়ামী লীগের কথাতো বাদই দিলাম।কারণ দেশের ৮০ ভাগ মিডিয়া এখনো তাদের। তাদের কথাই বলে আসছে এবং বলবে।এখন শুধু 
ঘাপটি মেরে আছে।একটু সময় খারাপ তাই।

বিএনপির কিছু কিছু লোক মনে করছে একটি চ্যানেল বা পত্রিকায় তাদের একজন বসে পড়ছে।সুতরাং ঐ মিডিয়া তাদের হয়ে গেছে। না মোটেও না। চ্যানেল ওয়ানে যেরকম আওয়ামী লীগের লোক বসানোয় সব ইন্টারনাল তথ্য পাচার হয়ে যেতো।ঠিক তেমনি এখনো তা-ই হচ্ছে। 

নতুন সংযোজন হলো, বিএনপিকে আগে শুধু আওয়ামী মিডিয়া লীগকে মোকাবেলা করতে হতো। এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে জামায়াতী সাংবাদিক গোষ্ঠী। তারাও  বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে কেউ প্রকাশ্যে কেউ গুপ্তভাবে আবির্ভূত হয়ে গেছে এবং যাবে। 

বিএনপির ২০০১ আমলেও আওয়ামী এবং জামায়াতি সাংবাদিকরা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছাকাছি ছিলো।এখনো আছে। আওয়ামী সাংবাদিকগুলো আওয়ামী পারপাস সার্ভ করেছে। যেমন, একটা নাম আজকে বলে দেই। ওই আমলে প্রথম আলো থেকে সাংবাদিক নামধারী যে ছাত্রলীগার, আওয়ামী লীগার বিএনপি বিট কাভার করতো। সে কে একটু মনে করলেই জানতে পারবে বিএনপি। সে কিন্তু পড়ে মিশন শেষ হয়ে যাবার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তার একটা অনলাইন আছে।পরে একই নামে সেটাকে দৈনিক পত্রিকাও করে। তিনি তার অফিসে গর্ব করে বলতো, ওয়ান ইলেভেনে বিএনপি ভেঙে আরেকটা বিএনপি করার অন্যতম কারিগর ছিলাম আমি। এই সাংবাদিক পড়ে কৃষক লীগের পদধারী নেতা হয়। ফরিদপুরের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার তদবির চালায়। পরে অবশ্য দলীয় কোন্দল ও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে জেলেও যায়।কিন্তু গোটা বিএনপির কয়জন এই তথাকথিত সাংবাদিকের বিষয়ে ওয়াকিবহাল।সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

 ঠিক তেমনি করে জামায়াতি সাংবাদিক বিএনপির পাশে ঘাপটি মেরে জামায়াতি পারপাস সার্ভ করেছে। এরা লন্ডন পর্যন্ত বিস্তৃত! মিশন শেষ হলে এরাও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। বিএনপিকে সার্স করতে হবে এরা কারা।তখন কারা ছিলো, আর এখন কারা আছে।নইলে ক্রাইসিস মোমেন্টে বিএনপির অবস্থা বারবার এরকম হবে। কারণ নিজেদের জেনুইন লোক থাকলেই না তারা দলের ক্রাইসিস মোমেন্টে এগিয়ে আসবে বা ঝাঁপিয়ে পড়বে। 

আজকের যে তরুণ দল এনসিপি এর মধ্যেও অনেক গুপ্ত ছেলে-পেলে আছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। তাই এরা কট্টর বিএনপি বিরোধী হলেও জামায়াত বিরোধী নয়। কারণ কেউ কেউ বলে এনসিপি জামায়াতেরই একটা এক্সটেনশন। তবে তাদের সবাই না। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলের অনেকেই।

রাজনীতিতে যার যে দল ভালো লাগে সে সেটা করতে পারে।কিন্তু মনে এক আর ব্যানার আরেকটা নিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করা অন্যায়। বর্তমানে একমাত্র বড় দল হিসেবে এবং এই মুহুর্তে বাংলাদেশের অভিভাবক হিসেবে বিএনপির ভূমিকা অপরিসীম।কারণ সকল ষড়যন্ত্র হচ্ছে মূলত বিএনপির বিরুদ্ধে।তাই এক্ষেত্রে বিএনপির পাইওনিয়ার ভূমিকা আবশ্যক।

এ দেশকে বিপ্লবের চেতনায় এগিয়ে নিতে বিএনপি কে  সর্ব দলীয় একটা বৈঠক আহবান করা দরকার। যেখানে সবার খোলামেলা কথা শুনবে বিএনপি। বিএনপির কাছে তাদের কি প্রত্যাশা সেটাও শুনবে এবং  ভবিষ্যত দেশ পরিচালনায় একটি রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক করবে বিএনপি, এনপিপি সহ অন্যান্য দলের সাথে। আর এজন্য বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতির অভিভাবক ম্যাডাম খালেদা জিয়া কে সামনে রেখে এগোতে হবে। সামনে নির্বাচনের আগে এটাই বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করছি।

মাহবুব জামান,
  ফ্রিলান্সা