‘মন্ত্রী থাকি কি লাভ, যদি ৮ বছরেও কাজ না হয়’
দীর্ঘদিনেও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষক সুলতান মিয়া।
প্রথম নিউজ, রংপুর: ‘মন্ত্রী সাইব হামার কতা ভুলি গেইছে। আট বছর ধরি নড়বড়া ভাঙা সেতু ধরি হামরা চলাফেরা করি। পাকা সেতু আছে রাস্তা নাই। সেতুর দুইপাশে বাঁশের জোড়া দিয়্যা সাঁকো বানাইছি। সেই সাঁকো দিয়্যা ১০ গ্রামের মানুষ যাওয়া আইসা করে। হামার কষ্ট নিয়্যা মন্ত্রী সাইব কোন দিনও কতা কয় নাই। হামার ভোগান্তির শ্যাষ নাই বাহে।’
দীর্ঘদিনেও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষক সুলতান মিয়া। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গোপিডাঙ্গা মৌলভিবাজার এলাকায় বাসিন্দা। তার মতো গ্রামের অন্য কৃষকরাও ক্ষুব্ধ, সংযোগ সড়ক ভেঙে গিয়ে সৃষ্ট দুর্ভোগের কবলে পড়ে।
কৃষক সুলতান মিয়া বলেন, ‘এই সেতু নিয়্যা গ্রামের মানুষজন বিরক্ত। হামরা বাণিজ্যমন্ত্রী থাকি শুরু করি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ইউএনও’র কাছে আবেদন করিয়াও কোনো কাজ হয় নাই। আর কোন্তে কইলে হামার সেতুর কাজ হইবে, হামরা একনা শান্তিতে চলাফেরা করিবার পামো। প্রত্যেক বছর বন্যা গ্রামের মানুষের কষ্টের শ্যাষ থাকে না।’
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের গোপিডাঙ্গা মৌলভিবাজার এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ পাকা সেতুটির দুইপাশে কোনো রাস্তা নেই। সেতুটির একপাশ হেলে যাওয়ায় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সেতুটির দুইপাড়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ইউএসএআইডি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে কেয়ার বাংলাদেশের সহযোগিতায়, এলজিইডির বাস্তবায়নে ৩৭ লাখ ২৪ হাজার ১৮৩ টাকা ব্যয়ে গোপিডাঙ্গা মৌলভিবাজার এলাকায় পাকা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে সেতুটি উদ্বোধন করেন কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া।
সেতুটি নির্মাণের কারণে এলাকার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন। দুই বছর এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহন ও যাতায়াত সুবিধায় লাভবান হন তারা। এরপর বছরে বছরে বন্যার সময়ে তিস্তার পানির তোড়জোড়ে সেতুটির দুইপাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়।
দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও সেতুটির সংযোগ সড়ক সংস্কার বা নতুন করে তৈরি না করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে যাতায়াত সুবিধা বিঘ্নিত হওয়ায় আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সেতুর দুইপাড়ে সাঁকো তৈরি করা হলেও সেটির এখন বেহাল দশা।
স্থানীয় মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতিবছর সেতুর দুই পাড়ের মাটি সরে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। আর জনগণের দুর্ভোগ আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাহেব দেখেন না। গ্রামের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী নাবিল হাসান বলেন, চরের শিক্ষার্থীদের সমস্যার খবর কেউ রাখে না। আমাদের মন্ত্রী আছে কিন্তু লাভ নেই। আট বছরেও সেতুটির কোনো সংস্কার কাজ হয়নি।
কৃষক আব্দুল আলিম জানায়, দীর্ঘদিন সেতুটির সংযোগ সড়ক মেরামত না হওয়ায় তার মতো অন্য কৃষকরাও ভোগান্তির শিকার। তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এলাকাবাসী আক্ষেপ করে বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে সেতু আছে সড়ক নাই। এসব কি দেশের মন্ত্রী ও আমলারা দেখেন না। বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে ১০ গ্রামের মানুষের দাবি সেতুটি নতুন করে তৈরি করে চরের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য ও যোগাযোগ সচল করা হোক। বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) হাফিজার রহমান বলেন, সেতুর সংস্কার ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনদের একাধিকবার বলেছি। কিন্তু বাজেটে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে সেতুটির কোনো গতি হচ্ছে না।
ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, গত কয়েক বছর সেতুর দুইপাড়ে মাটি কেটে ভরাট করেছি। আবারও বন্যায় ভেঙে গেছে। নড়বড়ে পাকাসেতুটি ভেঙে ফেলে নতুন করে সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রকৌশল দপ্তরে ৪ বার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রস্তবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন কাজ হচ্ছে না, তা জানি না। প্রয়োজনে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আবারও নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠানোর আশ্বাস দেন তিনি।