মতবিনিময়ে আসেননি আ.লীগ প্রার্থী, সিইসির উষ্মা

মতবিনিময়ে আসেননি আ.লীগ প্রার্থী, সিইসির উষ্মা

প্রথম  নিউজ, ঢাকা : ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভা ছিল আজ মঙ্গলবার (২৭ জুন)। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত অংশ নেননি। এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নির্বাচন ভবনে সিইসির সম্মেলন কক্ষে এ উপনির্বাচনের আট প্রার্থীকে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালন বিষয়ক সভা হয়। যথাসময়ে বৈঠক শুরু হলেও প্রায় আধঘণ্টা পর নৌকার প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার মতবিনিময় উপস্থিত হন। এ সময় সিইসি সবার উপস্থিতিতে প্রতিনিধির কাছে পরিচয় জানতে চান। তখন জানানো হয়, মোহাম্মদ আলী আরাফাতের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এসেছেন।


সিইসির এক পাশে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও অপর পাশে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার উপস্থিতিতে এক সারিতে বসেছিলেন প্রার্থী ও প্রতিনিধি। কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, উনি কেন আসেননি? প্রতিনিধি কেন এলেন? মিটিং শুরুর আধঘণ্টা পরে কেন এসেছেন? অবশ্য এ সময় সিইসির মাইক বন্ধ ছিল।


প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে মতবিনিময়ে পাওয়া যায়নি।

সিইসির প্রশ্নের জবাবে আরাফাতের প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, প্রার্থী অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাতের প্রতিনিধি উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, মোহাম্মদ আলী আরাফাত গতকালই (সোমবার) ইসির মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণের চিঠি পেয়েছিলেন। তিনি গতকাল দু-তিনটি প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার পর অসুস্থ বোধ করেন। তার জ্বর। তিনি নিজের ও অন্যদের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিজে সভায় না এসে আমাকে পাঠিয়েছেন।

প্রতিনিধি হয়ে বিলম্বে সভাস্থলে পৌঁছায় সিইসির জেরার মুখে পড়ে প্রার্থীর পক্ষে সভায় আর কোনও বক্তব্য রাখেননি বলেও জানান তিনি।

আচরণবিধি প্রতিপালনে অতি উৎসাহী হয়ে প্রচারণা না করে প্রার্থীদের সহিষ্ণু আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনে কোনও ধরনের কারচুপি, জবরদখলের চেষ্টা করলে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ ভোট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

সিইসি বলেন, ‘আমরা আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টির জন্য আপনাদের ডেকেছি।...আমরা কোনোভাবেই চাই না আচরণবিধি ভঙ্গ হোক।  আমরা আশা করি সেটা হবে না। অনেক সময় অজ্ঞতাবশত আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়। তারা অতি উৎসাহী হয়ে কিছু কিছু কর্ম করে ফেলেন।’

সোমবার প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। আগামী ১৭ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচন হবে।

আচরণবিধির বিষয়ে ইসির কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আমাদের কথা স্পষ্ট। তা হলো, আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করবো। অতীতেও আমরা এ চেষ্টা করেছি। ক্ষেত্র বিশেষে আমরা প্রার্থিতাও বাতিল করেছি। ওই রকম কোনও ঘটনা আশা করি ঘটবে না। আপনারাও সচেতন। আপনারা সংসদ সদস্য হয়ে আইন প্রণয়ন করবেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। এটা একান্ততভাবে কাম্য।’

কোনোভাবেই সহিংস মনোভাব না দেখিয়ে সহিষ্ণু হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সিইসি বলেন, ‘কাউকে আক্রমণ করবেন না। আক্রমণাত্মক কথা বলবেন না। মিছিল করতে গিয়ে ঢিল ছুড়বেন না। দোষারোপ করে বক্তব্য দেওয়াটা পরিহার করে চলাটা ভালো। মিথ্যা প্রচারণা আপনার বিরুদ্ধে হলে সেটা কাউন্টার করবেন ভদ্রভাবে। অহিংসভাবে। সহিংসতার আশ্রয় নেবেন না।’

এ উপনির্বাচন ইভিএমে না হলেও ব্যালটের ভোট সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন সিসিটিভি দিয়ে নিবিড়ভাবে মনিটর করবো। অনেকে পেশিশক্তি লাগিয়ে ব্যালটে সিল দেন। সেটা কিন্তু করবেন না। এমনও হতে পারে আমরা চিহ্নিত করতে পারলাম না। সেক্ষেত্রে আমরা টোটাল ভোট বন্ধ করে দিতে পারবো। যদি বুঝি এটা ব্যাপকভাবে হচ্ছে, এজন্য সার্বিক ভোট বিপন্ন হবে, বাধাগ্রস্ত হবে এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না, এটা আমাদের কাছে প্রতীয়মান হলে সম্পূর্ণ ভোট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো।’

ভোটে সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার বিষয়ে প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট না থাকলে ভোটের ক্ষেত্রে আপনারা অনেকটাই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বেন। কেউ অন্যায় আচরণ করছে কিনা, কারচুপি হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য পোলিং এজেন্ট লাগবে। নির্বাচন কমিশন এখানে বসে বসে সব কিছু দেখতে পারবে না। পোলিং এজেন্টও সেটা দেখবেন ‘

ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিতে কমিশনের অবস্থান তুলে ধরেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অসহিষ্ণু হয়ে উঠি। প্রচারণা চালাতে হবে অহিংস পদ্ধতিতে, শালীনভাবে।  আমরা ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। কে কারে ভোট দিলো এটা আমাদের মাথা ব্যথা নেই। ভোটাররা আসবেন। ভোট দেবেন। বাইরে এসে কোনও অভিযোগ করবেন না। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

সিইসি জানান, কোনও ভোটারকে বাধা দেওয়া যাবে না। তাহলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে কমিশন।

সভায় জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, মুক্তিজোটের মো. আকতার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল করিম স্বপন, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) ও তরিকুল ইসলাম ভুঞা অংশ নেন।