মাজারে হামলা ইরানে জনসম্মুখে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

মাজারে হামলা ইরানে জনসম্মুখে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর


প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরের একটি মাজারে গত বছরের প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার ভোরের দিকে জনসম্মুখে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।

দেশটির বিচারবিভাগ নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা মিজান অনলাইন বলছে, অভিযুক্ত দুই আসামি হলেন মোহাম্মদ রমেজ রশিদি ও নাইম হাশেম কাতালি। সুপ্রিম কোর্ট তাদের সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর শনিবার ভোরে জনসম্মুখে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।


ইরানে শিয়া মতাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাহ চেরাগ মাজার দেশটির ফারস প্রদেশে অবস্থিত। গত বছরের ২৬ অক্টোবর এই মাজারে প্রাণঘাতী হামলা হয়। সেই সময় হামলার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

ওই সময় নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, এক হামলাকারী ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে মাজারে প্রবেশ করছেন। প্রধান ভবনে যাওয়ার পথে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন তিনি। ওই সময় সেখানে আসা লোকজন ও মাজারের কর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালান তিনি।

প্রাথমিকভাবে দেশটির কর্তৃপক্ষ মাজারে হামলায় ১৫ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানায়। যদিও পরবর্তীতে এই হামলায় ১৩ জনের প্রাণহানি হয় বলে জানানো হয়েছিল। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলাকারী বন্দুকধারী তাজিকিস্তানের নাগরিক। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে হামলাকারীও মারা যান।

পরবর্তীতে আইএসের সংবাদমাধ্যম আমাদে মাজারে হামলার দায় স্বীকার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গিগোষ্ঠী। এর আগে, ২০১৭ সালে একযোগে ইরানের সংসদ ভবন ও দেশটির সাবেক সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির সমাধিতে হামলার দায় স্বীকার করে আইএস।

মাজারে হামলার ঘটনায় সহায়তার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের কর্তৃপক্ষ। শনিবার ভোরের দিকে যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তারা প্রতিবেশি আফগানিস্তানে সক্রিয় আইএসের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছিল। হামলাকারী বন্দুকধারীকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন তারা এবং তাকে মাজারে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

শাহ চেরাগ মাজারে হামলায় জড়িত অন্য তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের একজন মোহাম্মদ রহমানি। তিনি তেহরানে আইএসের প্রধান ছিলেন। তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দেশটির বিচারবিভাগ বলছে, মাজারে হামলায় অভিযুক্ত অপর দুই আসামি মোস্তফা জান আমানিকে ১৫ বছর এবং হামিদুল্লাহ কাবোলিকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ইরানে চলতি বছরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৫৮২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। এর আগে, ২০১৫ সালে ইরানে ৯৭২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল ইরান; যা এখন পর্যন্ত এক বছরে সর্বোচ্চ।