পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যৌতুক, নির্যাতনের অুভযোগে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যৌতুক, নির্যাতনের অুভযোগে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

প্রথম নিউজ, বরিশাল: গর্ভের সন্তান নষ্ট, যৌতুকের দাবিতে মারধর, মামলা দেওয়ায় কুপিয়ে জখম করাসহ নানা অভিযোগে বরিশালে পুলিশ সদস্য মো. আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্ত্রী।

আজ বুধবার (২১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মোসা. হ্যাপি আক্তার (২৯)। তিনি বরিশাল নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া সোবাহান মিয়ার পুল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।

লিখিত বক্তব্যে হ্যাপি জানান, ২০১৮ সালের শেষের দিকে পুলিশ কনস্টবল আবুল খায়েরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। শুরুতে আবুল খায়ের নিজেকে এসআই বলে পরিচয় দেন। একপর্যায়ে দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পুলিশ সদস্য হওয়ায় হ্যাপির পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি। পরে আবুল হ্যাপিকে তার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে চরকেওয়ার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট সংলগ্ন কাজি অফিসে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়দিন পর হ্যাপি জানতে পারেন, তার স্বামী একজন কনস্টেবল। মিথ্যা পরিচয় ছাড়াও আরেক নারীর সঙ্গে আবুলের অবৈধ সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়।

এর মাঝে হঠাৎ আবুল কনস্টবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি নিতে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। সেই টাকা হ্যাপির কাছে দাবি করেন তিনি। হ্যাপি তার বাবার বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে বুঝিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা এনে স্বামীকে দেন। পরবর্তীকালে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আবুল খায়ের প্রায়ই হ্যাপিকে মারধর করেন। ২০২২ সালের মাঝামাঝি একদিনের মারধরে হ্যাপি জ্ঞান হারালে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে হ্যাপি জানতে পারেন তার গর্ভে থাকা ৩ মাস ১৯ দিনের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে।

হ্যাপি এলাকার স্থানীয় মেম্বার এবং চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান। তারা বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। কিন্তু চলতি বছরের ৫ মার্চ হ্যাপিকে তার স্বামী তালাক দিয়েছেন জানিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন শাশুড়ি। কিন্ত তালাকের কোনো কাগজপত্র হাতে পাননি হ্যাপি। স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি যাওয়ার পর হঠাৎ মীমাংসার কথা বলে ঢাকার একাধিক স্থানে নিয়ে হ্যাপিকে নির্যাতনের পাশাপাশি হত্যার চেষ্টা চালান আবুল খায়ের।

গত ৯ মার্চ হ্যাপি পুলিশের আইজিপিসহ একাধিক কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে হ্যাপি বাদী হয়ে গত ২০ মার্চ বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুকের মামলা করেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়ার কারণে আবুল খায়েরকে ঢাকা থেকে মাদারীপুরের ডাসার থানায় বদলি করা হয় এবং ওই অভিযোগের তদন্তভার দেওয়া হয় মাদারীপুরের এএসপি মনিরুল ইসলামকে।

গত ২৮ মে মাদারীপুরের এএসপি অফিস থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে গৌরনদীর পশ্চিম খাঞ্জাপুর এলাকায় আবুল খায়েরসহ তিনজন মোটরসাইকেলে এসে অটোরিকশা থেকে হ্যাপিকে নামিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন। কয়েকজন পথচারী আহত হ্যাপিকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় হ্যাপি বাদী হয়ে গত ৩১ মে বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরও একটি মামলা করেন। বিচারক মামলাটি গৌরনদী থানার পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হয়ে আমি সুচিকিৎসাসহ কোনো আইনি সহায়তা পাইনি। এ ঘটনায় বরিশাল আদালতে দুটি মামলা করলেও পুলিশ আবুল খায়েরকে গ্রেফতার করছে না। এছাড়া মামলা তুলে না নিলে আমাদের শারীরিক মেলামেশার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে আবুল খায়ের।

এ বিষয়ে জানতে পুলিশ সদস্য আবুল খায়েরের ব্যবহৃত মোবাইলফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।