পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ‘মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ২৫০০০ সদস্য’
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার এই হুঙ্কারকে বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাধ্য হয়ে শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: রাশিয়ায় টান টান উত্তেজনা। ভয়ে কাঁপছে সবাই। সশস্ত্র ব্যক্তিরা সেনাবাহিনীর সদর দফতর ঘেরাও করে রেখেছে। ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী গ্রুপ ভাগনার-এর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন সরাসরি হুমকি দিয়েছেন। টেলিগ্রামে দেয়া পেস্টে তিনি বলেছেন, আমাদের ২৫ হাজার সদস্য মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার এই হুঙ্কারকে বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাধ্য হয়ে শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি একে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, পিছন থেকে ছুরি চালানো হয়েছে। প্রিগোজিন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করলেও আদতে একে দেখা হচ্ছে পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবে।
সামরিক অভ্যুত্থানের কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রিগোজিন। প্রিগোজিন বলেছেন, সামরিক অভ্যুত্থানের খবরটি উদ্ভট। তিনি বলেন, এটা সামরিক অভ্যুত্থান নয়। তবে ন্যায়বিচারের জন্য মার্চ। এর প্রেক্ষিতে পুতিন শনিবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রিগোজিনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, যারা সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহের নেপথ্যে আছেন, তাদেরকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। এরই মধ্যে প্রিগোজিনের বাহিনী ওয়াগনার বলেছে, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রোস্তোভ-অন-ডন শহর দখল করে নিয়েছে। সেখানকার নাগরিকদের ঘরের ভিতরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না দিলে মস্কোর দিকে মার্চ করার হুমকি দিয়েছেন প্রিগোজিন। এর আগে শুক্রবার রাত থেকে রাশিয়ার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবায় বিধিনিষেধ দেয়া হয়। মস্কোর রাস্তায় রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্রাককে টহল দিতে দেখা যায়। প্রিগোজিনের অভিযোগ, ইউক্রেনে তার বাহিনী ভাগনার-এর ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সেনারা। সেখানে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করছে ওয়াগনার বাহিনী। তবে তাদের ওপর হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।
মিনিটে মিনিটে সেখানে পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। নিজেরা আক্রান্ত হওয়ার পর শুক্রবার রাতে ওয়াগনার গ্রুপ ইউক্রেন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করে রাশিয়ার রোস্তোভ-অন-ডনে। রাশিয়ার দক্ষিণে সামরিক বাহিনীর সদর দফতর নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে। রোস্তাভ-অন-ভন শহরটি কৃষ্ণ সাগরের কাছে। বৃটিশ প্রতিরক্ষা মনস্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা সেখান থেকে ভোরোনেজ ওবলাস্টের ভিতর দিয়ে উত্তরে মস্কোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মস্কো থেকে ভোরোজে শহরটি প্রায় ৩০০ মাইল দক্ষিণে। অনলাইনে অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার দক্ষিণে একটি সেনা প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে রেখেছে সশস্ত্র সেনা সদস্যরা ও সাজোয়া গাড়ি। রাশিয়ান সেনারাই সেখানে প্রধান কার্যালয় প্রহরা দিচ্ছেন নাকি ওয়াগনার গ্রুপের সদস্য তারা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে নাটকীয় এক পরিবেশ। তরুণ বা যুবক শ্রেণিকে দেখা গেছে রাস্তায় চলাচল করছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক আছে।
কিন্তু ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বলেছেন, রোস্তোভ-ভন-ডন শহরে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনা তার গ্রুপ ওয়াগনার নিয়ন্ত্রণ করছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং ভ্যালেরি গেরাসিমভ যদি তার সঙ্গে কথা না বলেন, তাহলে তারা এক হাজার মাইল পথ মার্চ করে মস্কোর দিকে যাত্রা করবেন। এই ঘোষণা দিয়ে প্রিগোজিন দুটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তাতে তাকে সেনাবাহিনীর ওই আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়ের ভিতর দেখা গেছে। এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে রাশিয়া কর্তৃপক্ষ বা বিদ্রোহী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিন কেউই পিছু হটবেন বলে মনে হয় না। তাদের এই মুখোমুখি অবস্থানের ফলে রাশিয়া এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটি খণ্ডিত হয়ে যেতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনীর ব্যর্থতা এবং যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপক প্রাণহানির কারণে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ব্যর্থ বলে বার বার তাকে দায়ী করেছেন প্রিগোজিন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এ জন্য প্রয়োজন ছিল যে শোইগু যেন একজন মার্শাল হতে পারেন। তিনি যেন একজন দ্বিতীয় হিরো স্টার হতে পারেন। ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে বা নাৎসীবিরোধী যুদ্ধ নয়। একজন এক্সট্রা স্টারের জন্য এই যুদ্ধ। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অলিগার্চদের দায়ী করেন। বর্তমানে যে শাসকগোষ্ঠী রাশিয়া চালাচ্ছে তাদের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি আগাগোড়াই এমন অভিযোগ করলেও, এ সপ্তাহের প্রথম দিকে রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের ভিতরে ওয়াগনারের একটি ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এতে অনেকে হতাহত হয়েছেন। কিন্তু এ অভিযোগ শোইগুর মন্ত্রণালয় অস্বীকার করেছে। ক্রেমলিনের পর্যবেক্ষকরা মনে করেন দীর্ঘদিন ধরে প্রিগোজিন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুর মধ্যে বিদ্বেষ আছে। শোইগুর জেনারেলরা প্রিগোজিনকে দেখেন একজন ক্ষমতালিপ্সু হিসেবে। তবে যত যা-ই হোক। এখনও পর্যন্ত পুতিনের সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয় না প্রিগোজিনকে।
রাশিয়ায় বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গ বলছেন, এ ঘটনা ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য এক বিব্রতকর অবস্থা। প্রিগোজিনের ঘোষণার পর রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে, যাতে ওয়ানগার বাহিনীর যোদ্ধারা কোনোভাবে সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। শনিবার সকালে শোনা গেছে, মস্কো অঞ্চলে সন্ত্রাস-বিরোধী একটি গোষ্ঠী সচল করা হয়েছে। এসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সবকিছু চেষ্টা করছে রাশিয়া কর্তৃপক্ষ। মস্কোর জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। একে পুতিনের জন্য মারাত্মক এক বিব্রতকর অবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।