পণ্য পরিবহনে বাড়ছে সময়, সঙ্গে ব্যয়ও
বারবার কভিডের প্রাদুর্ভাব মহামারির শুরু থেকে চলা এ প্রতিবন্ধকতা জটিল করে তুলছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বেশির ভাগ দেশে তুলে নেয়া হচ্ছে বিধিনিষেধ। স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে দেশগুলো। ফলে ক্রমবর্ধমান রয়েছে ভোক্তা চাহিদা। এ অবস্থায় চলতি বছরের শুরুতে সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা কমার আশা করা হয়েছিল। তবে বারবার কভিডের প্রাদুর্ভাব মহামারির শুরু থেকে চলা এ প্রতিবন্ধকতা জটিল করে তুলছে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের পণ্য পাওয়ার অপেক্ষাও আরো দীর্ঘ হচ্ছে। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সাম্প্রতিক পণ্য পরিবহন ডাটা অনুসারে, খুচরা পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং করোনাজনিত বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্যের প্রবাহ গতিশীল করার প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বন্দরগুলোয় বিলম্ব বিশেষত গুরুতর হয়েছে। আর এর পরোক্ষ প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। কনটেইনারপ্রবাহে এ শ্লথগতি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে মূল্যস্ফীতির পারদ।
চলমান চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে চীন ও এশিয়াজুড়ে বিলম্ব আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। লজিস্টিক প্লাটফর্ম প্রজেক্ট ৪৪-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, চীনের উত্তর ডালিয়ান বন্দর থেকে প্রধান ইউরোপীয় বন্দর এন্টওয়ার্প পর্যন্ত যাত্রার সময় এক মাসের ব্যবধানে ২০ দিন বেড়েছে। যানজট ও অপেক্ষার সংমিশ্রণে জানুয়ারিতে যাত্রার এ সময় বেড়ে ৮৮ দিনে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বরেও এ দুই মহাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনে ৬৮ দিন সময় লাগত। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এটি ৬৫ দিন ছিল।
এ ছাড়া, চীনের দক্ষিণের ডালিয়ান থেকে পূর্ব ব্রিটিশ বন্দর ফিলিক্সস্টোয় পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে বেশি সময় লাগছে। গত ডিসেম্বরে ৮১ দিনের তুলনায় জানুয়ারিতে এটি ৮৫ দিনে উন্নীত হয়েছে, যেখানে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সময় লাগত ৬৫ দিন।
প্রযুক্তি কোম্পানি কনটেইনার এক্সচেঞ্জ জানুয়ারিতে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনকারী ৫০০ প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ চালিয়েছে। এ জরিপে ৬৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, চীনে চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে চলা ছুটিতে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কনটেইনার পরিবহন ব্যবস্থা আরো ব্যাহত হয়েছে।
প্রজেক্ট৪৪-এর জশ ব্রাজিল বলেন, সময়ের সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা কমার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। সরবরাহ ব্যবস্থা মহামারীপূর্ব স্থিতিশীলতায় ফিরে আসতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। কারণ নতুন জাহাজ তৈরির কাজ পুরোদমে চললেও সেগুলো ২০২৪ সালের আগে পরিষেবায় আসবে না। অর্থাৎ তাত্ক্ষণিক কোনো সমাধান নেই।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বন্দরগুলোর তুলনায় ইউরোপের অনেক কম বন্দরই যানজটের সম্মুখীন হয়েছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় জাহাজ ও পণ্যজটের কারণে সময়সূচি বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে সক্ষমতা আরো সংকুচিত হয়েছে। তবে এর প্রভাব কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাবে বিশ্বজুড়েই পণ্যের দাম বাড়বে।
প্রজেক্ট৪৪-এর ডাটা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলোয়ও বিলম্ব বেড়েছে। জানুয়ারিতে অকল্যান্ডে পণ্য পরিবহনে সময় বেড়েছে ১০ দিনেরও বেশি। লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্ষেত্রে এ সময় বেড়েছে ছয়দিন। যানজট নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি সংস্থাগুলো বিলম্ব কমাতে ডেলিভারি রুটগুলো ছোট করার এবং পণ্য সরবরাহে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে।
পণ্য পরিবহনে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এপি মুলার-মায়েরস্ক গত মাসে জানিয়েছিল, সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে পণ্য পরিবহনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: