নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পর নির্বাচন করবে বিএনপি: রিজভী
নারায়ণগঞ্জের খানপুর ব্যাংকলনী এলাকায় ঢাকার মহাসমাবেশে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করা মহানগর বিএনপির সদস্য মাহমুদ হোসেনের বাড়িতে এসে শোকার্ত পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে তারপর নির্বাচন করবে বিএনপি। এর আগে কোন নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সেটা আর নির্বাচন হবে না। সেটা হবে রাতের নির্বাচন বা অন্য কোন নির্বাচন। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হবে তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে তার অধীনেই নির্বাচন হবে। শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের খানপুর ব্যাংকলনী এলাকায় ঢাকার মহাসমাবেশে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করা মহানগর বিএনপির সদস্য মাহমুদ হোসেনের বাড়িতে এসে শোকার্ত পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি এ শোকাবহ পরিবারকে সমবেদনা জানাতে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহামুদের বাসায় এসেছি। তিনি গত ২৮ জুলাই বিএনপির মহা সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে স্লোগান দিতে দিতে গরমে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা মানসিক চাপে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মী যেমন শারীরিক চাপে আছেন তেমন মানসিক চাপেও আছে। বাসায় বসে থাকলেও তাদের নামে মামলা হয়। পুলিশি আক্রমন ও হানায় তারা এতটাই মানসিক ভাবে ক্লান্ত যে কখন কে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় ঠিক নেই।
মাহমুদের নামে অসংখ্য মামলা। প্রতিনিয়ত তার নামে মামলা। তিনি দলের নিবেদিতপ্রান নেতা ছিলেন। কখনও দলীয় কর্মসূচি থেকে বিরত থাকত না। সে স্লোগান দিতে দিতে ঢাকার সমাবেশস্থলে গিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এ ধরনের নিবেদিত নেতাকর্মী ঘরে ঘরে আছে বলেই দল এখনও টিকে আছে।
সাজায় বিএনপি দমে যায়নি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে। যে নেতা সাড়া দেশের মানুষকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করেছে তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। তার স্ত্রী স্বনামধন্য চিকিৎসক তাকেও মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। যেন তিনি দেশে ফিরতে না পারেন। তবে এগুলোতে কোন লাভ হয়নি। কেউ কিন্তু দমে যায়নি। দেশনেত্রীর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আওয়াজ আমাদের উজ্জীবিত করে। লন্ডন থেকে দেশনায়ক তারেক রহমান দলকে সুসংগঠিত করছেন। আজ সারাদেশের জাতীয়তাবাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। আওয়ামী লীগের ও পুলিশের হামলার পরেও তারা দাঁড়িয়ে আছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। সেই একজন নেতা মাহমুদ। তিনি শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দলের জন্য কাজ করে গেছেন। তার এই আত্মত্যাগে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরনা পাচ্ছি।
রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার গণমাধ্যমকেও নানান ভাবে চাপ দিচ্ছে। জোবায়েদা রহমান একটি বিখ্যাত পরিবারের পূত্রবধূ। শুধুমাত্র তাকে হেয় করার জন্য সরকার এ রায় দিয়েছে। এর একটি অভিযোগও সত্য নয়। কত মামলা বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে। সাগর রুনির মামলা নিরানব্বই বার পেছানো হয়েছে। আর এ মামলা বিশ দিন এক মাসের মধ্যে বিচার করে সাজা দেয়া। এটাই তো প্রমান করে যে সরকার রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যে এ রায়গুলো দেয়া হচ্ছে।
এতে উপস্থিত দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এই ভয়ের দমন পীড়ন চালাচ্ছে তারা। মাহমুদ ছিলেন দলের নিবেদিত প্রাণ নেতা। তার পাশে থাকতে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা এসেছি। আমরা উনার পরিবারের পাশে সবসময় থাকব।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপিকে দমন করতে পুলিশসহ লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, তারেক রহমানের ডাকে সারাদেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এখন তাদের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি গণদাবি, স্বাধীনতার সময় থেকে মানুষ তাদের দাবি আদায়ে যখনি মাঠে নেমেছে তারা সফল হয়েছে। এবারো তাই হবে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, মানুষ জেগে উঠেছে। মাহমুদ ভাইয়ের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমরা আমাদের আন্দোলন আরো বেগবান করব।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি'র সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান, জেলা বিএনপি'র সাবেক সহ সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন, মহানগর বিএনপির নেতা কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের রহমান জিকু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহেদ আহমেদ প্রমুখ।