নানান প্রতিভায় সমৃদ্ধ গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্মবার্ষিকী আজ

নানান প্রতিভায় সমৃদ্ধ গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্মবার্ষিকী আজ

প্রথম নিউজ, বিনোদন প্রতিবেদক: তার রচিত গানের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে জনপ্রিয়, কালজয়ী গানের তালিকাটিও বেশ লম্বা। দেশের আর কোনো গীতিকার এতো সংখ্যক গান রচনা করেছেন কিনা, সে বিষয়ে জানা যায় না। এছাড়া, তিনি অনেক গানে সুর দিয়েছেন। নির্মাণ করেছেন বহু চলচ্চিত্র। লিখেছেন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, করেছেন প্রযোজনা।

নানান প্রতিভায় সমৃদ্ধ সেই মানুষটির নাম গাজী মাজহারুল আনোয়ার। বাংলা গানের ইতিহাসে যাকে একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করেন সঙ্গীত সংশ্লিষ্টরা। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় সর্বোচ্চ তিনটি গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। এগুলো হলো—‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’। সেই সূত্রে তাকেও বাংলা গানে সর্বকালের সেরা গীতিকার বললে ভুল হবে না মোটেও।

২২ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) জীবন্ত কিংবদন্তি এই গীতিকার ও চলচ্চিত্রকারের জন্মদিন। ১৯৪৩ সালের এই দিনে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার মূলত জমিদার বংশের সন্তান। তার দাদা ছিলেন জমিদার। পরিবারের প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও তিনি ছোটবেলা থেকেই দেশ, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি দারুণ আগ্রহী ছিলেন। সেই আগ্রহ থেকে তার ভেতরে জন্ম নেয় সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা। যা তাকে ধীরে ধীরে পরিণত করে একজন গীতিকারে।

মাত্র ২১ বছর বয়সেই গাজী মাজহারুল আনোয়ার গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে তার লেখা প্রথম গান প্রচার হয়। সেই থেকে শুরু। তারপর কেটে গেছে অর্ধশতাধিক বছর। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন হাজার হাজার গান। মুগ্ধ করেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ইতিহাসকে।

বাংলা চলচ্চিত্রের গানে গাজী মাজহারুল আনোয়ার অনন্য। তার ধারে কাছেও আর কেউ নেই। ১৯৬৭ সালে ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে গান লেখা শুরু করেন। এই সিনেমায় তার রচিত ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ শীর্ষক গানটি স্থান পায়। এরপর তিনি সিনেমার চিত্রনাট্য রচনাতেও যুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন নির্মাতা ও প্রযোজক হিসেবেও।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গীতিকবিতায় উঠে এসেছে মানব জীবনের প্রায় সব কিছুই। তিনি যেমন দেশ ও প্রকৃতি নিয়ে লিখেছেন, তেমনি জীবন, মানবতা, প্রেম, বিরহ নিয়েও রচনা করেছেন ভুরিভুরি গান।

তার রচিত জনপ্রিয় গানের সবগুলো নাম উল্লেখ করা প্রায় অসম্ভব। তবু কয়েকটি গানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। যেমন—‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘যার ছায়া পড়েছে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’ ইত্যাদি।

১৯৮২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তার নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘নান্টু ঘটক’। এরপর তিনি ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘চোর’, ‘সন্ধি’, ‘স্বাক্ষর’, ‘শর্ত’, ‘সমর’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘স্নেহ’, ‘আম্মা’, ‘পরাধীন’, ‘তপস্যা’, ‘উল্কা’, ‘ক্ষুধা’, ‘রাগী’, ‘আর্তনাদ’, ‘জীবনের গল্প’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘পাষাণের প্রেম’ ও ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’ সিনেমাগুলো নির্মাণ করেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার সুবাদে গাজী মাজহারুল আনোয়ার দেশের প্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল’ লাভ করেছিলেন। ২০০২ সালে তাকে প্রদান করা হয় একুশে পদক। এছাড়া, তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।