নেতাকর্মীদের জন্য কঠোর বার্তা দিয়েছে বিএনপি
প্রয়োজনে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হবে না দলটির হাইকমান্ড।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ‘চেইন অব কমান্ড’ নিশ্চিতে হার্ডলাইনে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যত প্রভাবশালী নেতাই হোক আনা হবে জবাবদিহির আওতায়। প্রয়োজনে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হবে না দলটির হাইকমান্ড।
কেন্দ্র থেকে তৃণমূল-সব স্তরের নেতাকর্মীদের এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৯ নেতাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। বাকি চার সিটিতেও যারা চূড়ান্তভাবে ভোটের মাঠে থাকবেন তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্রমতে, আগামীতে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনকে সামনে রেখে অনেকের ধারণা ছিল, যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোট করছেন তাদের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয়তা দেখানো হতে পারে। তবে এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বার্তা যাওয়ার শঙ্কা ছিল। প্রশ্ন ওঠার সুযোগ ছিল কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়েও। তাই দলের শৃঙ্খলার স্বার্থেই বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড।
সূত্র আরও জানায়, শুধু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করাই নয়, যেসব নেতা সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন না-তাদের ব্যাপারেও কঠোর হচ্ছে দল। শুরুতে কর্মসূচিতে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হবে। এরপরও সক্রিয় না হলে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি জন্ম থেকেই সুশৃঙ্খল দল। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আরও মজবুত হয়েছে দলের চেইন অব কমান্ড। বর্তমানে দলে সুদৃঢ় ঐক্য রয়েছে। এ কারণেই শত নির্যাতনের পরও কোনো নেতাকর্মী বিএনপি ছেড়ে যায়নি। তিনি আরও বলেন, আগামীতে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সব স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যাতে সমন্বয় ও বোঝাপড়া থাকে সে লক্ষ্যে কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে কেউ শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতা বলেন, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলের সব স্তরে চেইন অব কমান্ড মজবুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন স্তরে শৃঙ্খলার ঘাটতি রয়েছে বলে হাইকমান্ডকে জানানো হয়। বলা হয়, দলের অনেক স্তরে জুনিয়ররা সিনিয়রদের যথাযথ সম্মান করে না।
দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও একই চিত্র দেখা যায়। জুনিয়র অনেক নেতা স্টেজে চেয়ার দখল করে বসে থাকেন। সিনিয়র নেতারা আসার পরও তারা চেয়ার ছাড়েন না। দলের নিচু সারির অনেক নেতা এমনকি অঙ্গসংগঠনের অনেকে মঞ্চে অবস্থান করেন। এতে অনেক সিনিয়র নেতা মঞ্চে উঠার সুযোগ পান না।
হাইকমান্ডকে আরও বলা হয়, দ্রুত এ বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলে সামনে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দলে শৃঙ্খলা না থাকলে রাজপথের আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে চেইন অব কমান্ডের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। কর্মসূচি পালনে অনেক জায়গায় ছিল সমন্বয়হীনতা।
তাই রাজপথে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালনে দলের চেইন অব কমান্ড নিশ্চিত করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। পরে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দলের চেইন অব কমান্ড নিশ্চিতে কোনো ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড।
সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দেন একাধিক নেতা। সিটি নির্বাচনে অংশ না নিতে জনগণকে আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে।
এ সময় কয়েক নেতা বলেন, একদিকে সিটি নির্বাচনে অংশ না নিতে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, অন্যদিকে বিএনপির নেতারা ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন-এটা অনেকেই ভালোভাবে নেবে না। তাই জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বানের পাশাপাশি যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট করছেন তাদের ব্যাপারেও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাহলে জনগণ বিএনপির আহ্বানে সাড়া দেবে।
সূতমতে, এর আলোকেই মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। বাকি চার সিটির নির্বাচনে যারা মাঠে রয়েছেন প্রথমে তাদের শোকজ করা হবে। এরপরও যারা ভোটের মাঠে থাকবেন তাদেরও বহিষ্কার করা হবে। সূত্র আরও জানায়, দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেসব নেতা অবস্থান নেবেন তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
সবাইকে দলের এ অবস্থানের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। কেউ দলের এ সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিলে বা বক্তব্য দিলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি দলের যত প্রভাবশালী নেতাই হন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটি পরিচালিত হয়। কেউ ইচ্ছা করলেই যা খুশি তা করতে পারেন না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিলে তার বিরুদ্ধে করণীয় কি হবে তা গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বলা আছে।
সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কিছু নেতা এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটের মাঠে রয়েছেন। যা স্পষ্টই দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী। তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।