অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে সরকার বিদেশীদের কাছে ধরনা দিচ্ছে: মির্জা ফখরুল

সরকার একদিকে সেনশন পড়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন রকম যে অপকর্ম করেছে সেগুলো প্রকাশ হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। সেই কারণে আজকে তারা এভাবে ধর্ণা দিচ্ছে বিদেশীদের কাছে।

অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে সরকার বিদেশীদের কাছে ধরনা দিচ্ছে: মির্জা ফখরুল
বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নিজেদের অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে সরকার বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। রাজধানীর হোটেল পূর্বানীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ বর্তমান প্রেক্ষাপট: কোনো প্রতিকার নেই, দূষণ বেড়েই চলেছে, দেশের মানুষ বেঁচে আছে অসহায় অবস্থায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ    করেন দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ এখন টিকে আছে শুধুমাত্র এই সমস্ত অপকর্ম করে এবং বিদেশীদের কাছে গিয়ে বাঁচতে চায়। একদিকে সেনশন পড়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন রকম যে অপকর্ম করেছে সেগুলো প্রকাশ হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। সেই কারণে আজকে তারা এভাবে ধর্ণা দিচ্ছে বিদেশীদের কাছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন নির্বাচন আসছে তখন আমেরিকার কাছে দৌড়াচ্ছে, আমেরিকা গিয়ে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলছে যে, বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য সাহায্য করেন আমাদেরকে। যখন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে- নির্বাচন কেমন করতে যাচ্ছেন আপনার, সেখানে কী বিরোধী দল আসছে এবং স্পষ্ট জিজ্ঞাসা করে বলেছেন যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আপনারা কি ব্যবস্থা করছেন? তখন তিনি(পররাষ্ট্র মন্ত্রী) বলেছেন যে আপনি আমাদেরকে সাহায্য করেন বিএনপিকে আনার জন্য। আর এই লোকগুলো সারাক্ষন কথা বলতে থাকে যে আমরা নাকী বিদেশীদের কাছে ধর্না দেই, আমরা বিদেশীদের সাহায্য নিয়ে কাজ করি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে গেছে, ভঙ্গুর হয়ে গেছে। আমরা সেটা লক্ষ্য করেছি করোনা সংক্রমণ যখন আসলো সেই সময়ে আমরা দেখলাম আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধবংস হওয়ার বিষয়টি। এর কারণ কি? এ্ই সরকারের একটা মাত্র লক্ষ্য থাকে দুর্নীতি, কিভাবে টাকা বানানো যায়। সেজন্য কী করেছে? করোনা টেস্টের নাম করে টাকা বানিয়েছে তারা, বিভিন্ন হাসপাতাল,ক্লিনিকগুলোকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা কিভাবে দুর্নীতি করেছে। আমরা দেখলাম তাদের সমর্থনপুষ্ঠ একজন ব্যক্তিকে লাভবান করার জন্য ভারত থেকে যে ভ্যাকসিন আনা হলো তার দাম তিন/চার গুন বেশি। শুধুমাত্র সরকারের মদদপুষ্ঠদের লাভবান করতে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখবেন সেখানে অবস্থাটা কী? বিশেষ করে মফস্বল হাসপাতালগুলোতে কোনো স্বাস্থ্য সেবা নেই। জেলাগুলো বাদ দেন আপনি পিজি হাসপাতালে যান দেখবেন। আমি কয়েকদিন আগে একজন রোগীকে দেখতে গিয়েছিলাম পিজি হাসপাতালের কেবিনে। যে কেবিনে টাকা দিয়ে থাকতে হয়। সেই কেবিনে গিয়ে দেখলাম টাইলস গুলো ভেঙে গেছে।চেয়ার একটা আছে তার একটা পা নেই, তিনটা পা আছে এবং বার্থ রুমে যাওয়া যায় না। এই যে অবস্থা এটার কারণটা হচ্ছে যে, এই সরকার এসব বিষয় কোনো খেয়ালই নেই। তাদের এক মাত্র লক্ষ্য হচ্ছে মেগা প্রজেক্ট।মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হবে, লক্ষ্ লক্ষ টাকা আয় করে বিদেশে পাঠানো যাবে, সেই টাকা দিয়ে বেগমপাড়া(কানাডা) বাড়ি তৈরি করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিছুক্ষন আগে আমাদের স্থায়ী সদস্য বলেছন, বিবেক দুষন। বিবেক তখনই দুষিত হবে যখন পুরো রাষ্ট্র দুষিত হয়ে যায়, পুরো প্রশাসন দুষিত হয়ে যায়, সব কিছু দুষিত হয়ে যায়। আজকে আমাদের মানুষদের বাঁচাতে হলে, বিবেকে দুষিত না করতে হলে এই পৃথিবী বা প্ল্যানেটকে রক্ষা করতে হলে আমাদের যেটা দরকার সত্যিকার অর্থেই জনদরদী, জনগণের প্রতিনিধিমূলক একটা সরকার দরকার এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্ট দরকার। সেজন্য সবার আগে দুষনমুক্ত একটা নির্বাচন দরকার। দুষন মুক্ত নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন হতে হবে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং সেই সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটা জবাবদিহিমূলক অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে, তার মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবা্ই আমাদের নিজের বাঁচার জন্যে, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে, আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।

প্রধান অতিথির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে আমাদের স্বাস্থ্য যেমন ভালো নয়, বাংলাদেশের সামাজিক স্বাস্থ্যও ভালো নয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য ভালো নয়, বাংলাদেশের প্রশাসনিক স্বাস্থ্য ভালো নয়, রাজনৈতিক স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য ভালো নয়। বাংলাদেশ ভালো নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই। বিচার বিভাগ আজকে দলীয়করণ, এদেশে সুশাসন নেই, নিরাপদ পানি পাওয়া যায় না। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।  এর কারণ হচ্ছে এই সরকার জনগনের ভোটের সরকার নয়, গণতান্ত্রিক সরকার নয়। সেজন্য তাদের কাছে জনগনের স্বার্থ গুরত্বপূর্ণ নয়, তারা নিজেরা সিন্ডিকেট করে লুট করছে, মুনাফা নিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের  সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইন্টারনেটের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, খায়রুল কবির খোকনসহ কেন্দ্রীয় অঙ্গসংগঠনের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom