দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এই সরকারকে হঠানোর বিকল্প নেই: মির্জা ফখরুল

সব সিন্ডিকেটের প্রধান হচ্ছে আওয়ামী নেতারা। বাংলাদেশে যত চাঁদাবাজি, ঘুষ—সব কিছুর মূলে এই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার চেষ্টা করেছে।

দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এই সরকারকে হঠানোর বিকল্প নেই: মির্জা ফখরুল
বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দেশে দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এই সরকারকে হঠানোর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুবদল আয়োজিত সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন—করোনার পরে এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম সব জায়গায় বেড়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে থেকে শুরু হলো? আর কবে থেকে এ দেশের মানুষ চিৎকার করছে তেলের দাম কমাও, চালের দাম কমাও, ডালের দাম কমাও, আমরা আর পারছি না। ২ বছর ধরে করোনায় যে চুরি-ডাকাতি আপনারা করেছেন স্বাস্থ্য খাতে এবং করোনাকে কেন্দ্র করে, প্রণোদনা দেওয়ার নামে বড়লোককে সরকারি টাকা দিয়েছেন, গরিবকে আরও গরিব করেছেন। সে কথার জবাব কে দেবে, প্রধানমন্ত্রী?

তিনি বলেন, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা সবাই বলছেন, এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশে এই সময়ে দরিদ্রের সংখ্যা আরও ২ শতাংশ বেড়েছে। সারা দেশে আজ প্রকৃত নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ বলতে পারে না, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় মুখে 'মুখোশ' পরে, সেখানে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। ধাক্কাধাক্কি করে, মারামারি করে কোনো রকমে ১ লিটার তেল অথবা চাল, একটু আলু পেল।

বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, জিনিসপত্রের দাম কমাও-না হলে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেদিনই পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা কেজি প্রতি বেড়ে গেল। এর অর্থ এই সরকারের বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এর প্রধান কারণ হলো সব সিন্ডিকেটের প্রধান হচ্ছে আওয়ামী নেতারা। বাংলাদেশে যত চাঁদাবাজি, ঘুষ—সব কিছুর মূলে এই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল, একই অবস্থা ছিল। তাদের সেদিনের অযোগ্যতা-দুর্নীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মরে গিয়েছিল। আবার ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ আজ মানুষের ওপর যন্ত্রণা, নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম অধিকার; খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, এ দেশের মানুষ সহ্য করতে করতে অনেক সহ্য করতে শিখে গেছে। ট্রাম ভাড়া ৪ পয়সা বাড়লে, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে কলকাতা বন্ধ হয়ে যায়। এরা ১৪ বছর ধরে এত নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে কিন্তু আমরা ঠিক সেভাবে বন্দ করতে পারছি না। বন্দ করতে হবে আমাদের। সমস্ত অন্যায় নির্যাতন-নিপীড়ন করছে তা বন্ধ করতে হলে, মানুষকে বাঁচাতে হলে, দুর্ভিক্ষ যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হলে এই সরকারকে হঠানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

এই সরকার যদি আরও কিছু দিন ক্ষমতায় থাকে তাহলে এই দেশের অস্থিত্ব থাকবে না। এরা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। প্রশাসন যন্ত্র, আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছে। আজ দুর্নীতি এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে, কোনো কিছুই দুর্নীতি থেকে বাকি নেই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তার অন্যতম কারণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো। আরেকটি কারণ হলো, গ্যাসের দাম বাড়ানো। গ্যাস আমাদানি করার প্রধান লোকটি হলো সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তিনি যতবার আমদানি করেছেন, ততবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা যে এ দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে তার জবাব তারা দিতে পারবে না। এভাবে সিন্ডিকেট করে এ দেশ থেকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। সম্পদ লুট করে বিদেশে বাড়ি-ঘর তৈরি করছে, বলেন বিএনপি মহাসচিব।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। সুতরাং ভালোয় ভালোয় পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।

গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে খালেদা জিয়া আজ অসুস্থ অবস্থায় বন্দি রয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দিন শুরু হয় কোর্টে হাজিরা দেওয়ার মাধ্যমে। দলের নেতাকর্মীদেরকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, রুখে দাঁড়াতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারকে পরাজিত করার মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালামসহ যুব দলের নেতারা।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom