তামাক ব্যবহারে প্রতিবছর মৃত্যু প্রায় ১ লাখের বেশি
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা উদযাপন’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, তামাক ব্যবহারে প্রতিবছর মৃত্যু হয় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে এক জরিপে বলা হয়, আমাদের দেশে তিন কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে এই মৃত্যুর মিছিল কমাতে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। কারণ বিদ্যমান আইনে কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে।
সেগুলো হলো- আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা: বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডক্টিস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি, আজকের এই দিনে দক্ষিণ এশীয় স্পীকার্স সামিটের সমাপনী ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে তামাকের ব্যবহার নির্মূল করার ঘোষণা দেন। একই সাথে এই লক্ষ্য অর্জনে তিনটি পদক্ষেপের কথা জানান।
সেগুলো হলো- স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা; তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণ করা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের জন্য সব ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, আমরা সবাই জানি তামাক রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয়। যে তামাক বিক্রি করে তারতো লাভ হয়। আর আমরা যারা সেবন করি আমরা আমাদের নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করি। এটা আমাদের ইকোনমির জন্য খারাপ, পরিবেশের জন্য খারাপ, একথায় এটা সবকিছুর জন্য খারাপ।
আমি নিজেই একসময় ধূমপান করতাম। এখন আমার হার্টে সমস্যা হয়ে গেছে। এখন বর্তমানে অনেক ইয়াং লোক হার্টের রোগ হয়। এটা হওয়ার কারণ হলো ধূমপানসহ অন্যান্য জিনিস সেবন করা। আমাদের প্রধামন্ত্রী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের যে ব্যবস্থা করেছে সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস-এর লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী প্রমুখ।