ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে দীর্ঘ যানজট
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খানাখন্দে যানবাহন আটকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যানজট নিরসনে কাজ করছেন।
প্রথম নিউজ, গাজীপুর: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টিতে খানাখন্দ ও মহাসড়কে ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। টঙ্গীর বড়বাড়ী থেকে স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকাগামী ও ময়মনসিংহগামী লেনে আটকে গেছে যানবাহন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খানাখন্দে যানবাহন আটকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যানজট নিরসনে কাজ করছেন।
পুলিশ, যাত্রী ও বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টির কারণে সোমবার থেকে যানজট লেগেছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় সড়কে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সেই খানাখন্দগুলো বর্তমানে ছোট বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। বিআরটি কর্তৃপক্ষ খানাখন্দ মেরামতে ইট সুরকি দিলেও ভারী যানবাহন চলাচল করায় তা টিকছে না। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বড়বাড়ি থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত ঢাকাগামী লেনে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
টঙ্গীর যানজটের কথা মাথায় রেখেই কাক ডাকা ভোরে গাজীপুরের সালনা এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে রওনা হয়েছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, ঢাকায় দুপুরে একটি অনুষ্ঠান আছে, যানজটের কথা মাথায় রেখে ভোরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তবুও যানজট পিছু ছাড়ল না। ঘণ্টা খানেকের পথ পেরুতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। এ থেকে মুক্তির পথ খোঁজা দরকার।
প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের সুপার ভাইজার মো. মোজাম্মেল হক জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরের জৈনাবাজার থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের ফার্স্ট ট্রিপ ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। গাড়িটি সকাল ৭টার আগেই গুলিস্থানে পৌঁছার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর থেকে যানজটের কারণে গাড়িটি সকাল সোয়া ৯টায় গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায় গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছে। গাড়িটি ঢাকায় ঢুকতেই পারেনি। গাড়ি থেকে অনেক যাত্রীই হেঁটে ও বিকল্প পথে রওনা হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা পরিবহনের চালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যানজটের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। যানজটের কারণে আমাদের ট্রিপ কমে গেছে, চড়া বাজারে আমাদের আয়-রোজগারও কমে গেছে। গাজীপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহনের পরিচালক মো. কামরুল হাসান রিপন জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বৃষ্টিতে তৈরি হওয়া খানাখন্দ কোথাও কোথাও গর্ত তৈরি হয়েছে। এই পথে চলতে গিয়ে মঙ্গলবার তাদের দুই বাসের চাকা ব্লাস্ট হয়েছে এবং ৩০টি গাড়ির স্প্রিংয়ের পাতি ভেঙে গেছে। পুলিশ ও বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা ইট, বালুসহ নানা উপকরণ দিয়ে সেই খানাখন্দ মেরামত করলেও ভারী যানবাহন চলাচল করায় তা উঠে গিয়ে বড় গর্তের তৈরি হয়েছে। এসব খানাখন্দ ও গর্তের কারণেই যানজট তৈরি হয়েছে।
অপরদিকে টঙ্গীর মিল গেট ও মুন্নু গেট এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের কাজ করতে গিয়ে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে মহাসড়কে গর্ত হয়ে পুরোনো রাস্তাও বের হয়ে পড়েছে। রাস্তায় গর্ত সাময়িকভাবে মেরামত করলেও তা উঁচু-নিচু হয়ে আছে। ফলে রাস্তায় যানবাহন স্বভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুলতান উদ্দিন বলেন, গাজীপুরের যানজট দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। আমাদের পরিবহনগুলো দৈনিক ঢাকায় ছয়বার যাতায়াত করতো, আর যানজটের কারণে এখন এক-দুই বার যাতায়াত করাই কঠিন। এতে মালিক-শ্রমিকদের আয় কমে গেছে, তারা খুব কষ্টের মধ্যে দিন পাড় করছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঢাকাগামী গাড়িগুলো দুই-তিন লেনে এসে টঙ্গীর মিল গেট এলাকায় এক লেনে ঢাকায় প্রবেশ করছে। যানজট নিরসনে গত রাতে ওই অংশে ময়মনসিংহমুখী মহাসড়কে এক লেনের মেরামত কাজ হয়েছে। আজ থেকে ঢাকামুখী লেনের মেরামত কাজ শুরু হবে। এছাড়াও সড়ক ভবনে সওজের প্রধান প্রকৌশলীর সভাপতিত্বে বুধবার হাইপ্রোফাইলদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের এ অংশটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণভাবে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেবে বিআরটি কর্তৃপক্ষ। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছি। এ অংশ কোনো গাড়ি ফেঁসে গেলে আমাদের স্ট্যান্ডবাই দুটি রেকার রয়েছে , তা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি উদ্ধার করে সচল রাখার চেষ্টা করছি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews